লিবিয়ায় মানবপাচারকারী মাফিয়াদের হাতে বন্দি মাদারীপুরের শাহাবুল হোসেন মাতুব্বর (৪৫)। এক বছর পার হয়ে গেলেও তার কোনো হদিস পাচ্ছে না পরিবারের লোকজন। এতে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন শাহাবুলের স্বজনরা। এদিকে, সন্তানকে ফিরে পেতে স্থানীয় মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেও শাহাবুলের বাবা গফুর মাতুব্বর এখনও পর্যন্ত কোনো সুরাহা পায়নি।

মামলার নথি থেকে জানা গেছে, পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় ২০২২ সালের ১২ মার্চ মাদারীপুর সদর উপজেলার কুমড়াখালী গ্রামের এমদাদ বেপারী তার খালাতো ভাই ইতালি প্রবাসী আল-আমিন হাওলাদার এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি বিমানে লোক নিয়ে থাকেন। এমদাদ বেপারীর প্রলোভনে শাহাবুল মাতুব্বর ইতালি পাঠানোর জন্য এমদাদ বেপারী (৫০), আয়শা বেগম (৪০), লক্ষীগঞ্জ গ্রামের নাসির তালুকদার (৩৫) ও তার স্ত্রী মুক্তা বেগম (২৮), আল-আমিন হাওলাদার (৩৫) ও হাজরাপুর গ্রামের ফিরোজ হাওলাদারকে সর্বমোট ১৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। পরে ওই বছরেরই ২৫ মার্চ শাহাবুল মাতুব্বরকে মাদারীপুরের নয়াচর গ্রামের বাড়ি থেকে এই মানবপাচারকারী চক্র সরাসরি ইতালিতে না পাঠিয়ে লিবিয়ার মাফিয়াদের হাতে তুলে দেয়। 

পরে মাফিয়াদের হাতে বন্দি করে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছেলেকে দিয়ে আরও ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু মুক্তিপণের ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা স্থানীয় মানবপাচারকারী চক্রের কাছে দেওয়া হয়। তারপরও শাহাবুলকে মুক্তি দেয়নি। এ ঘটনার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা গত এক বছর ধরে শাহাবুলের সঙ্গে কথা বলতে পারছে না। কোনো খোঁজ খবরও পাচ্ছে না। এতে চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন যাপন করছেন পরিবারের সদস্যরা।

এ ঘটনায় ছেলেকে ফিরে পেতে শাহাবুলের বাবা গফুর মাতুব্বর গত ২৩ মে মাদারীপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করতে গেলে থানা পুলিশ আদালতে মামলা দায়ের করার পরামর্শ দেয়। পরে আদালতে একটি মামলা দায়ের করলেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ মামলার প্রধান আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি।

এ বিষয়ে মামলার বাদী নিখোঁজ শাহাবুলের বাবা গফুর মাতুব্বর বলেন, আমার ছেলেকে ইতালি নেবে বলে আমাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নেয়। পরে ছেলেকে লিবিয়ায় আটকে রেখে আরও ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ নেয়। তবুও আমার ছেলেকে ইতালি পৌঁছে দেয়নি কিংবা জীবিত আমাদের কাছেও ফেরত দেয়নি। আমার ছেলে বেঁচে আছে কিনা সেটিও আমরা জানি না। এদিকে মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দিলেও পুলিশ এখনও প্রধান আসামি এমদাদ বেপারীসহ অন্যদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। ছেলেকে ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা পুরো পরিবার মানসিকভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছি। আমরা আমাদের ছেলেকে চাই।

নিখোঁজ শাহাবুলের মামাতো ভাই মো. ইদ্রিস মোল্লা বলেন, আমি শাহাবুলকে ইতালি পাঠানোর সময় টাকা লেনদেনে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়া নিয়ে আমার ভাইকে বন্দি করে রেখেছে। আমরা গত এক বছর ধরে তার কোনো হসিদ পাচ্ছি না। আদালতে মামলা দায়ের করেও এ ঘটনার তেমন কোনো সুরাহা পাচ্ছি না। থানা পুলিশের কাছে আমার অনুরোধ, তারা যেন অবিলম্বে মামলায় উল্লেখিত মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করে শাহাবুলকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করে দেয়।

এ বিষয়ে কথা হয় মাদারীপুর সদর মডেল থানা পুলিশের ওসি মো. মনোয়ার হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এ মামলার প্রধান আসামি এমদাদ বেপারীকে আমরা গ্রেপ্তার করার জন্য চেষ্টা করছি। তাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে শাহাবুলের খোঁজ পাওয়া যাবে। আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।

রাকিব হাসান/এমএএস