আর মাত্র কয়েক দিন পরই ঈদুল আজহা। সবাই ব্যস্ত হয়ে উঠবে পশু বেচা কেনায়। তবে পশু বিক্রির হাটে এবার উঠবে না রাজাবাবু। গ্রামের প্রান্তিক কৃষক হওয়ায় হাট-বাজারের ঝামেলা নিতে চান না রাজাবাবুর মালিক লালচাঁন মাদবর। এছাড়াও শরীয়তপুরের স্থানীয় বাজারে কখনও এতো বড় গরু বিক্রির জন্য আসেনি। তাই শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মিরাশা গ্রামে এসে কিনতে হবে রাজাবাবুকে। আধুনিক পদ্ধতিতে রাজাবাবুর ওজন ৪০ মণ। ওজন অনুযায়ী মালিক রাজাবাবুর দাম হেঁকেছেন ২০ লাখ টাকা। 
 
প্রায় দুই বছর আগে লালচাঁন মাদবরের ছেলে আবু বকর মাদবর জানতে পারেন তার দূর সম্পর্কের ভাই ইমরান পাবনার ঈশ্বরদী পশুর হাট থেকে ফ্রিজিয়ান জাতের একটি বাছুর নিয়ে এসে বিক্রি করতে চাচ্ছেন। বাছুরটি আবু বকরের পছন্দ হলে দেড় লাখ টাকার বিনিময়ে ক্রয় করেন লালচাঁন মাদবর। ফ্রিজিয়ান জাতের বাছুরটির নাম রাজাবাবু রেখে ছেলে আবু বকরকে উপহার দেন তিনি।

লালচাঁন মাদবর পেশায় একজন গৃহস্থ। তার গোয়ালে রাজাবাবু ছাড়াও ৯টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি দুধেল গাই, ৩টি বাছুর ও ৩টি ষাঁড়। লালচাঁন মাদবর কৃষি কাজের পাশাপাশি গাভীর দুধ বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন।

রাজাবাবুর পছন্দের খাবার নেপিয়ার কাঁচা ঘাস। তবে কাঁচা ঘাস ছাড়াও খড়-বিচুলি, ভূসি, চাল-খেসারীর কুড়া, খৈল, ভুট্টা, ছোলা খেয়ে রাজাবাবু এখন জেলার সবচেয়ে বড় গরু। এর আগে এই অঞ্চলে এতো বড় গরু আর দেখা যায়নি।

সরেজমিনে রাজাবাবুর সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায় গরুটি দেখতে এসেছেন শাওন বেপারী নামে এক ক্রেতা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এতো বড় গরু এর আগে শরীয়তপুরে দেখিনি। গরুটি দেখে ভালো লাগলো। আশা করছি এর মালিক ন্যায্য মূল্য পাবেন।

রাজাবাবুর দেখাশোনা করেন আবু বকর মাদবর। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, তাজা কৃষি পণ্যের কারণে মিরাশা চাষি বাজার বাংলাদেশে পরিচিত একটি নাম। এই বাজারে পদ্মা সেতু হয়ে প্রতিদিন রাজধানী ঢাকা থেকে কয়েকশ পাইকার আসেন কৃষি পণ্য ক্রয় করতে। শরীয়তপুরের বাজারগুলোতে এতো বড় গরু বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা কম। রাজাবাবু ওজন ও আঁকারে বড় হওয়ায় পশুর হাটে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। যেহেতু পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকেও ক্রেতা সরাসরি আমাদের বাড়িতে আসতে পারবেন তাই পারিবারিকভাবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি বাড়িতে বসেই বিক্রি করবো রাজাবাবুকে। বাড়িতে বসে শেষ পর্যন্ত বিক্রি না হলে ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে নেব রাজাবাবুকে।

রাজাবাবুর মালিক লালচাঁন মাদবর ঢাকা পোস্টকে বলেন, রাজাবাবুকে অন্য গরুগুলো থেকে একটু আলাদাভাবে যত্ন করেছি। নিজে না খেয়ে হলেও রাজাবাবুর যত্ন নিয়েছি। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাইয়ে বড় করেছি। রাজাবাবুর খাবারের জন্য প্রতিদিন এক হাজার টাকা খরচ হয়। এর মাংস সুস্বাধু ও নিরাপদ হবে। আমি সহজ সরল মানুষ। হাট বাজারে গেলে দালাল, ফরিয়ারা থাকবে। টাকা পয়শা নিয়ে আসতে ভয় থাকবে। আমি গরুটা বাড়িতেই বিক্রি করতে চাই।

জাজিরা উপজেলার প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মেহেদী হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, লালচাঁন মাদবর সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে দেশীয় খাবার খাইয়ে গরুটা লালন-পালন করেছে। আশা করছি আগামী কোরবানির ঈদে তিনি গরুটার ন্যায্য মূল্য পাবেন।

এমএএস