ভোট সুষ্ঠু না হলে সরকার পতনে সর্বোচ্চ আন্দোলন : ফয়জুল করিম
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। বিশেষ করে বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহ দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ার পরপরই ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর মনোনয়ন বদলে যাওয়ার গুঞ্জন, আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগ সাদিক আব্দুল্লাহর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে ইসলামী আন্দোলনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ নেতা মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করিমের মেয়র নির্বাচনে আসা এবং ‘হাতপাখায় ভোট দিলে তা পাবেন নবী-রাসুল’ এমন ভিডিও নতুন করে আলোচনায় আসাসহ ভোটের মাঠ নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন মেয়র প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টের নিজস্ব প্রতিবেদক সৈয়দ মেহেদী হাসান।
ঢাকা পোস্ট : নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড পাচ্ছেন কিনা?
বিজ্ঞাপন
ফয়জুল করিম : প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমাদের সবার সামনে ওয়াদা করেছেন নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবেন এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকবে। সে অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করি। মাঝখানে কিছুটা বিপত্তির সম্ভাবনা দেখছি। তবে এখনও ফিল্ড ভালো, একেবারেই বাধাগ্রস্ত হচ্ছি না।
ঢাকা পোস্ট : বাধা পেলে মাঠ ছাড়বেন কিনা?
ফয়জুল করিম : মাঠ ছাড়ব কেন? নির্বাচন কমিশন বলেছে তাদের অবহিত করতে। আমরা অবহিত করলে তারা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। জানানোর পরও যদি পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন তখনকার পরিস্থিতি হবে ভিন্ন। তখন জনগণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বজায় রাখতে পারে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা কিছুই করবো না। আর কোনো অবস্থাতেই মাঠ ছাড়ব না। নির্বাচনে যেখানে হাতপাখা বিপুল ভোটে বিজয় অর্জন করবে সেখানে মাঠ ছাড়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। হাতপাখার ভয়ে হয়ত অন্য কেউ মাঠ ছাড়তে পারে।
ঢাকা পোস্ট : হাতপাখায় ভোট দিলে ভোট পাবে নবী-রাসুল এমন বক্তব্যের নেপথ্যে কী?
ফয়জুল করিম : এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর প্রথম দিন থেকে আমি একটি জবাব দিয়ে আসছি। আমি আদর্শ সর্ম্পকে আলোচনা করেছি, প্রতীক না। নৌকা শুধু প্রতীক না, নৌকা সেক্যুলারিজম আদর্শ লালন করে, ধানের শীষ ডেমোক্রেসি লালন করে। কাস্তে, কুড়াল, চাকা লালন করে কমিউনিজম ও সমাজতন্ত্রবাদ। তেমনি হাতপাখা ইসলামী আদর্শ বাস্তবায়ন করতে চায়। আমি এসবই ব্যাখ্যা সহকারে বলেছিলাম। কিন্তু তা কাটছাঁট করে একটি কথার সঙ্গে আরেকটি কথা বাদ দিয়ে আমার বক্তব্য ছেড়ে দিয়েছে। তাতে মনে হয় যেন হাতপাখাকে ভোট দিলে নবী-রাসুলকে ভোট দেওয়া হয়। যে বক্তব্য প্রচার হয়েছে সেটি অসম্পূর্ণ এবং কাটছাঁট করা।
ঢাকা পোস্ট : ভিডিওটি আলোচনায় আসার পর আইনি কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন?
ফয়জুল করিম : না। আমি তো প্রথমেই জবাব দিয়েছি। যেভাবে গণমাধ্যমে এসেছে সেখানেও জবাব দিয়েছি।
ঢাকা পোস্ট : ২৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর দাবি করেছেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ হাতপাখাকে বিজয়ী করতে তিন কোটি টাকা দিয়েছেন। আপনার দল কোনো টাকা নিয়েছে কিনা?
ফয়জুল করিম : কাউন্সিলর শরীফ মো. আনিছুর রহমান আরও বলেছেন যে, আমি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর লোক ছিলাম। আমি নিশ্চিত টাকাটা উনার (শরীফ মো. আনিছুর রহমান) কাছে গেছে। টাকা তো আমরা পাইনি। দুদকের উচিত তিন কোটি টাকা আদায় করা। সে তো নিশ্চিত করে বলেছে টাকা দিয়েছে। টাকাটা তাহলে কোথায় গেল তা বের করা উচিত। আমি প্রশাসনকে বলব, এই তিন কোটি টাকা কোথায় আছে, কীভাবে আছে, কার কাছে আছে তা বের করা উচিত।
ঢাকা পোস্ট : তিন কোটি টাকার সন্ধান পেলে কী আপনি নেবেন?
ফয়জুল করিম : আমি নেব কেন? অবৈধ টাকা আমি নেব না। আমি শুধু দেখতে চাই তিন কোটি টাকা কোথায় আছে, কীভাবে আছে।
ঢাকা পোস্ট : ভোট সুষ্ঠু না হলে কী পদক্ষেপ নেবেন?
ফয়জুল করিম : আমরা পরামর্শ করেছি। যদি কোনো অবস্থাতেই ভোট সুষ্ঠু না হয় তাহলে এই সরকারকে নামাতে (পতন) এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করার জন্য সর্বোচ্চ আন্দোলন করা হবে।
ঢাকা পোস্ট : ভোটের প্রচারণায় ধর্ম ব্যবহারের অভিযোগের বিষয়ে কী বলবেন?
ফয়জুল করিম : যারা ধর্মকে পুঁজি করে নতুনভাবে ব্যবসা শুরু করেছে তারা ধর্মের আলোচনা করে। যেমন আমি আগে থেকেই টুপি ব্যবহার করি। আর কেউ মাত্র টুপি পরা শুরু করেছে। আমি আগে থেকেই মসজিদে যাই, কেউ মাত্র মসজিদে যাওয়া শুরু করেছে। আমি আগে থেকেই পাঞ্জাবি পরি, কেউ মাত্র পাঞ্জাবি পরা শুরু করেছে। আমি আগে থেকেই কলেমা পড়ি, কেউ মাত্র কলেমা পড়া শুরু করছে। আমি নিজে ধার্মিক কিন্তু যারা ধর্ম ব্যবসা করে তারা মাঝেমধ্যে ছাড়ে, মাঝেমধ্যে ব্যবসা করে। আমি ব্যবসা করি না, আমি ধর্ম নিয়ে চলি। ওরা হচ্ছে ধর্ম ব্যবসায়ী। ধর্মকে পুঁজি করে ভোট নেয় এরপর ধর্মের বিরুদ্ধে লাগে। আমরা ধর্মকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য নির্বাচন করি, আন্দোলন করি, রাজনীতি করি।
ঢাকা পোস্ট : ইভিএম নিয়ে এখনও শঙ্কায় আছে কিনা?
ফয়জুল করিম : ফলাফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত সংশয়মুক্ত নই। যখন রেজাল্ট হয়ে যাবে তখন বলতে পারব আসলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে নাকি কারচুপি হয়েছে।
ঢাকা পোস্ট : কথা ছড়িয়েছে সাদিক আব্দুল্লাহ মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় আপনি নির্বাচনে এসেছেন। এ বিষয়ে কী বলবেন?
ফয়জুল করিম : হুমকি-ধামকি ও গুজব রাজনীতির একটি অংশ। আজকে যদি সাদিক আব্দুল্লাহ নির্বাচনে আসতো আর আমরা নির্বাচনে যেতাম তাহলে এই পক্ষ (সাদিক অনুসারী) বলতো মন্ত্রী (পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী) ও হিরন গ্রুপ আমাদের টাকা দিয়ে দাঁড় করিয়েছে। ঠিক একইভাবে এখন বলছে। আচ্ছা গাজীপুর, খুলনায় হাতপাখার প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে কোন গ্রুপ?
ঢাকা পোস্ট : ভোটারদের উদ্দেশ্যে আপনার আহ্বান কী থাকবে?
ফয়জুল করিম : আমি মহানগরীর সমস্ত লোকদের বলব, আসুন আমরা সম্মিলিতভাবে বরিশাল শহরকে নিরাপদ শহর হিসেবে গড়ে তুলি। যেখানে মেয়েদের ইজ্জতের নিরাপত্তা থাকবে, মায়েদের ইজ্জতের নিরাপত্তা থাকবে, পুরুষদের ইজ্জতের নিরাপত্তা থাকবে। ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা থাকবে, চাকরি, ব্যবসা, সড়কে নিরাপত্তা থাকবে। অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থান ও জানমালের নিরাপত্তা থাকবে। সব কিছুর নিরাপত্তা থাকবে। এমন বরিশাল শহর গড়ে তোলার জন্য সকলকে আহ্বান করবো। আসুন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ শুরু করি।
এমজেইউ