পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে গাছে বেঁধে যুবককে পিটুনি
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে বিরোধের জের ধরে তার ভাই মো. সুমনকে (৩৫) পুলিশ পরিচয়ে তুলে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। নির্জন স্থানে নিয়ে বিবস্ত্র করে সুমনের শরীরে পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়া হয়। একপর্যায়ে পানি চাইলে তার মুখে কাঁদা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে তিনি বমি করলে ফের তার মুখে লতাপাতা ঢুকিয়ে দেন নির্যাতনকারীরা।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সুমন তার ওপর নির্যাতনের বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন ও সাংবাদিকদের কাছে জানিয়েছেন। ওসি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বিজ্ঞাপন
ভুক্তভোগী সুমন উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মজিদ রাজীবের বড় ভাই। তারা চরবাদাম ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল বাশারের ছেলে। তারা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বচরসীতা গ্রামের বাসিন্দা।
অভিযুক্ত আব্দুর রহিম উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও একইন ইউনিয়ন যুবলীগের বিতর্কিত কমিটির সভাপতি।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী সুমন জানান, গতকাল বুধবার (৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পূর্বচরসীতা গ্রামের পঞ্চায়েত বাড়ি জামে মসজিদের সামনের রাস্তায় দুটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে কয়েকজন লোক আসেন। একপর্যায়ে মামলা আছে বলে তারা সুমনকে তুলে নিয়ে যান। পঞ্চায়েত বাড়ি জামে মসজিদ থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে ভুলুয়া নদীর পাশে ফিরোজ মিয়ার প্রজেক্ট এলাকায় তাকে নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তিনি সবাইকে চিনতে পারেন। সেখানে নিয়ে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে ফেলা হয়। তাকে তুলে আনা লোকজন তার মোবাইল ফোন থেকেই ইউপি সদস্য আবদুর রহিমকে কল দেন।
এরপর ইউপি সদস্য আবদুর রহিম আসার পরই তাকে বিবস্ত্র করার নির্দেশ দেন। একপর্যায়ে তার শরীরে পিঁপড়া ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় আবদুর রহিমসহ তার লোকজন সুমনকে এলোপাতাড়ি লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন। প্রায় তিন ঘণ্টা তাকে বিবস্ত্র করে রাখেন। পরে তার মুখে কাঁদা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে তিনি বমি করে দেন। এ সময় ফের তার মুখে লতাপাতা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। পরে মুখমন্ডলে কালোকাপড় বেঁধে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান আব্দুর রহিম ও তার লোকজন।
এর মধ্যে পরিবারের লোকজন থানা পুলিশ ও ডিবি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন যে পুলিশের কেউই তাকে আটক করেনি। পরে পরিবারের লোকজন ও স্বজনরা তার খোঁজ পায়। খবর পেয়ে রাত ১টার দিকে পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়।
সুমন বলেন, আমি বিভিন্নভাবে আবদুর রহিম ও তার লোকজনের কাছ থেকে পানি চেয়েছি। তারা আমাকে পানি পর্যন্ত দেয়নি। তারা আমার মুখে কাঁদা ও লতাপাতা ঢুকিয়ে দিয়েছে। তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছে। আবদুর রহিম ঘটনাস্থল পৌঁছার পরই আমার ওপর নির্যাতন শুরু করা হয়।
ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল মাজেদ রাজীব বলেন, রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে আবদুর রহিমের সঙ্গে আমার বিরোধ রয়েছে। গত ডিসেম্বরে তিনি আমার হাত ভেঙে দেন। এ ঘটনার মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করে আবদুর রহিম ৮ দিন জেল খেটেছেন। পরে তিনি জামিনে বের হন। এরপর তিনি বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দিয়েছেন। আমার সঙ্গে শত্রুতার জের ধরেই তিনি সুমনকে তুলে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালিয়েছেন। আমরা এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার চাই।
তবে ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম বলেন, এ ঘটনায় আমি কিছুই জানি না। পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে। ছাত্রলীগ নেতা রাজীব তার ভাইকে দিয়ে নাটক সাজিয়ে আমাকে হয়রানি করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
রামগতি উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মেজবাহ উদ্দিন হেলাল বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। আব্দুর রহিম খারাপ প্রকৃতির লোক। তবে রাজীবদের সঙ্গে তাদের পূর্ব শত্রুতা রয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী চরবাদাম ইউনিয়ন যুবলীগের কমিটি স্থগিত রয়েছে। তিনি নিজেকে কেন যুবলীগের সভাপতি দাবি করছে তা আমি জানি না।
এ ব্যাপারে রামগতি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
হাসান মাহমুদ শাকিল/আরএআর