রাজশাহীতে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে বিস্ফোরণে নিহত ১৭

কথা ছিল বড় ভাই সেনাসদস্য নুর মোহাম্মদের বাসায় দুপুরের খাবার খাবেন নাজমা খাতুন (২৭)। স্বামী ফুল মিয়া (৩৫), ছেলে ফয়সাল আহমেদ (১৩) ও দুই মেয়ে সামিয়া খাতুন (৮) এবং সুমাইয়া খাতুন (৪) সঙ্গে ছিল। তাদের সঙ্গে ছিলেন একই মাইক্রোবাসে ছিলেন ​আরও ১৩ জন। ১৮ জনের ১৭ জনই এখন লাশ।

শুক্রবার (২৬ মার্চ) দুপুর পৌনে ২টার দিকে রাজশাহীর কাটাখালীতে বাসের ধাক্কায় মাইক্রোবাস ও লেগুনার গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে আগুনে পুড়ে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

মৃতদের মধ্যে এক পরিবারের পাঁচজন। মাইক্রোবাসযোগে সেনাসদস্য নুর মোহাম্মদের রাজশাহীর বাসায় যাচ্ছিলেন তারা। তাদের সঙ্গে ছিলেন ফুল মিয়ার বন্ধু একই উপজেলার রাজারামপুর গ্রামের সালাহউদ্দিন, তার স্ত্রী সামছুন্নাহার, সামছুন্নাহারের বোন কামরুন্নাহার, তাদের সন্তান সাজিদ ও সাবা এবং ফুলমিয়ার আরেক বন্ধু একই উপজেলার দারিকাপাড়া গ্রামের মোখলেসুর রহমান ও মাইক্রোবাসচালক হানিফ মিয়া পচা। এই ১২ জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তারা রংপুর ও পীরগঞ্জ উপজেলা থেকে রাজশাহী আসছিলেন।

নগরীতে প্রবেশের পথে কাটাখালী থানার সামনে মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে টেনে নিয়ে যায় হানিফ পরিবহনের যাত্রীবাহী বাস। এতে মাইক্রোবাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়ে দগ্ধ হন যাত্রীরা। দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাস থেকে ১১ জনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দগ্ধ ছয়জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।

মাইক্রোবাস থেকে উদ্ধার ১১ মরদেহের কাউকে চেনা যাচ্ছে না। তবে এর মধ্যে পাঁচজন পুরুষ, ‍চারজন নারী এবং দুজন শিশু বলে শনাক্ত করেছে পুলিশ। অন্যদিকে রামেক হাসপাতালে মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে দুজন পুরুষ, দুজন নারী ও দুই শিশু।

পুলিশ জানায়, মরদেহ শনাক্ত করার মতো অবস্থা নেই। অধিকাংশের মরদেহ চেনা যাচ্ছে না। এজন্য তাদের নাম-পরিচয় শনাক্ত করতে দেরি হচ্ছে।

দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কাটাখালী থানায় মরদেহ শনাক্ত করতে এসেছেন নাজমা খাতুনের বড় ভাই নূর মোহাম্মদ। তিনি রাজশাহীতে সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট পদে কর্মরত।

নূর মোহাম্মদ জানান, পীরগঞ্জ উপজেলার বড় মজিদপুর এলাকায় তার বোন নাজমার বাড়ি। নাজমা, তার স্বামী ও বন্ধু এবং ছেলেমেয়েদের নিয়ে রাজশাহীতে তার বাসায় বেড়াতে আসছিলেন। দুপুর দেড়টার দিকে ফোনে বোনের সঙ্গে শেষ কথা হয় তার। ওই সময় নাজমা বলেছেন নাটোরে আছেন, চলে আসবেন অল্প সময়ের মধ্যে।

দুপুরে নগরীর তেরখাদিয়া এলাকার বাসায় একসঙ্গে খাবার খাওয়ার কথা ছিল তাদের। বিশ্রাম নিয়ে পরে শহর ঘুরতে বের কথা ছিল। পৌঁছাতে দেরি দেখে দুপুর পৌনে ২টার দিকে বোনের নম্বরে ফোন দিই। রিং বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে যায় মোবাইল। ভেবেছিলাম; নেটওয়ার্ক সমস্যা। পরে দুলাভাইকে ফোন দেওয়ার পর তার ফোনটিও একইভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর শঙ্কিত হয়ে পড়ি। কিছুক্ষণ পরই দুর্ঘটনার খবর পাই।

নূর মোহাম্মদ, নিহত নাজমা খাতুনের ভাই

নূর মোহাম্মদ বলেন, মাইক্রোবাসে ১৮ জন ছিলেন। এর মধ্যে ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের ১২ জন আমার আত্মীয়-স্বজন। বাকিদের পরিচয় জানা নেই।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, থানার সামনের মহাসড়ক দিয়ে রাজশাহীর দিকে যাচ্ছিল একটি বাঁশবোঝাই ভ্যান। পেছন থেকে ভ্যানটি অতিক্রমের চেষ্টা করে কালো রঙের একটি মাইক্রোবাস। এ সময় ঢাকাগামী হানিফ পরিবহনের বাসের ধাক্কায় মাইক্রোবাসে আগুন ধরে যায়। বাসটি রাস্তার পাশে পড়ে যায়। এতে পুড়ে মারা যান মাইক্রোবাসের ১৭ আরোহী।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম