কুষ্টিয়ায় আ.লীগের কার্যালয়ে হামলা-ভাঙচুর, ইউপি সদস্যসহ আহত ২
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২ জুন) সন্ধ্যার দিকে উপজেলার ধরমপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাতবাড়িয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য রহিদুল ইসলাম বুদুসহ (৫৫) দুজন গুরুতর আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন, ধরমপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও সাতবাড়িয়া গ্রামের মৃত রহমত প্রামানিকের ছেলে রহিদুল ইসলাম বুদু এবং একই এলাকার কামাল আলীর ছেলে সুলতান আলী (৪০)।
বিজ্ঞাপন
আহতরা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শরিফুজ্জামান নবাব বলেন, বহুবছর আগে থেকে সাতবাড়িয়া আঞ্চলিক আওয়ামী লীগের অফিসে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বসেন। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল ইসলাম কুব্বাতের হাতে গড়া সেই অফিসে ১৯৯১ সালে শেখ হাসিনা এসেছিলেন। সেই অফিস ভাংচুর করা হয়েছে। এ সময় অফিসে থাকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিও ছিঁড়ে ফেলা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে একটি পারিবারিক গানের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে মাতলামি করে সাতবাড়িয়া গ্রামের মন্ডলপাড়ার জিদান, রাসেল, রাজিব, শাহীন। এরপর তারা একটি মাইক্রো গাড়িও ভাংচুর করেন। এ সময় স্থানীয়রা তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে তারা সেখান থেকে চলেও যায়। পরে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে জিদান, রাসেল, রাজিব, শাহীনসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগের অফিসে অতর্কিতভাবে হামলা করে। এতে ধরমপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রহিদুল ইসলাম বুদু ও আওয়ামী লীগের কর্মী সুলতান আলী গুরুতর আহত হন। তাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করবো। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ইয়ানুস আলী বলেন, থানা পুলিশের উপস্থিতিতে ধরমপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে জিদান, রাসেল, রাজিব, আরিফ, শরিফ, শাহীনসহ প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন রামদা, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে হামলা করে। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের অফিসে বোমা হামলা করে, গুলি করে, জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় তারা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মারপিট করে। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় বুদু মেম্বার ও সুলতান কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী চা বিক্রেতা খাকসার আলী বলেন, আমি চা বিক্রি করছিলাম। সন্ধ্যার দিকে ৮ থেকে ১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে এসে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা করা হয়। নেতাকর্মীদের তারা মারপিট ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। তারপর পুনরায় তারা আওয়ামী লীগের অফিসে ঢুকে পুলিশের উপস্থিতিতে বোমা মারে, শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুর করে ও অফিসের চেয়ার-টেবিলসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। এ সময় তারা আমার চা দোকানে হামলা করে কেটলি, গ্যাসের চুলা, চেয়ার, টেবিল রামদা দিয়ে কেটে ফেলেছে এবং ভাঙচুর করেছে। আমি গরিব মানুষ। তারা আমার অনেক ক্ষতি করে দিয়েছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে একটি গানের অনুষ্ঠানে দুপক্ষের ঝামেলা হয়। এতে রাজু নামের এক যুবককে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সন্ধ্যায় ইউপি সদস্য ও স্থানীয়দের ওপর হামলা করে আওয়ামী লীগের অফিস ভাঙচুর করা হয়। কে বা কারা তাদের উপর হামলা ও অফিস ভাংচুর করেছে তা আমি জানি না। এ ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। আমার বিরুদ্ধে আনা সমস্ত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম লালু ও তার লোকজন আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম চুন্নু, ধরমপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাহাবুল আলম লালুর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেন নি।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমুল ইসলাম ছানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এলাকার বাইরে ছিলাম, আমার মোবাইল সাইলেন্ট ছিল। আমি এইমাত্র শুনলাম কিছু একটা ঘটেছে। এই ঘটনা সম্পর্কে আমি এখনও বিস্তারিত জানি না।
এ বিষয়ে ভেড়ামারা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, আওয়ামী লীগের অফিস ভাংচুর ও হামলার ঘটনায় এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। কাউকে আটক করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঘটনার পরপরই ভেড়ামারা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ওই এলাকার বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
রাজু আহমেদ/এবিএস