চাকরি না পেয়ে দিয়েছেন রেস্টুরেন্ট, সেখানেই পোড়ালেন সার্টিফিকেট
শিক্ষাজীবনের অর্জন একাডেমিক সনদপত্র আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন ঢাকা কলেজের সাবেক এক শিক্ষার্থী। তার নাম আব্দুস সালাম। তিনি নেত্রকোণার মোহনগঞ্জ পৌরশহরের দেওথান গ্রামের শামছুর রহমানের ছেলে।
জানা যায়, সরকারি চাকরির জন্য অসংখ্যবার আবেদন করেও চাকরি পাননি সালাম। এদিকে বয়স শেষ হওয়ায় তার সনদপত্রগুলো সরকারি-বেসরকারি কোনো চাকরিতেই আর কাজে লাগছে না। তাই তিনি চাকরি না পেয়ে মোহনগঞ্জ পৌর শহরের স্টেশন রোডে 'কুটুম বাড়ি' নামে একটি রেস্টুরেন্ট দিয়েছেন। তিনি বর্তমানে সেই রেস্টুরেন্টের ব্যবসার মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করছেন।
বিজ্ঞাপন
তাই গতকাল মঙ্গলবার (৩০ মে) রাতে সেই রেস্টুরেন্টে বসেই নিজের শিক্ষাজীবনের অর্জন সনদপত্র আগুনে পুড়িয়ে দেন সালাম। পরে সেই সনদ পুড়ানোর ছবি ও ভিডিও নিজের ফেসবুকে পোস্ট করলে মুহূর্তেই বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকেই বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষে নানারকম মন্তব্য জানিয়েছেন।
আব্দুস সালামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৬ সালে মোহনগঞ্জ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ২০০৮ সালে ময়মনসিংহের আলমগীর মনসুর (মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন সালাম। পরে ২০১৬ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে দর্শন শাস্ত্রে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। পড়াশোনা শেষে এনএসআই, রেলওয়ে ও পুলিশের এসআইসহ বিভিন্ন চাকরিতে আবেদন করেও চাকরি হয়নি তার। তাই চাকরির বয়স শেষে হতাশ হয়ে নিজের শহরে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করেন।
ক্ষোভ প্রকাশ করে সালাম বলেন, সনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছি রেজাল্টও ভালো। কিন্তু অসংখ্য আবেদন করেও চাকরি হয়নি। অথচ লবিং-ঘুষে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা চাকরি পেয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এখন আমার বয়স ৩৬ বছর। সরকারি-বেসরকারি কোনো চাকরিতেই আর আবেদনের সময় সুযোগ নেই আমার। তাই অকেজো এই সার্টিফিকেট তাই পুড়িয়ে দিলাম। সরকারি চাকরির বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি জানাই। এতে আমার না হোক পরবর্তী প্রজন্ম উপকৃত হবে। তাদের হয়তো এভাবে আর সার্টিফিকেট পোড়াতে হবে না।
সালাম আরও বলেন, আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান হয়ে শুরু থেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। গ্রুপিং রাজনীতি চাকরি পাওয়ার জন্য ক্ষতিকর।
সার্টিফিকেট পোড়ানো ইডেন কলেজ ছাত্রী মুক্তাকে চাকরি দেওয়া ঠিক হয়নি উল্লেখ করে সালাম বলেন, এটা মন্ত্রী মহোদয় ঠিক করেননি। একজনের জন্য আলাদা নিয়ম হতে পারে না। সবার জন্য চাকরির বয়স সীমা বাড়ানো দরকার। তাহলে সবাই এই সুযোগটা পাবে।
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ছাব্বির আহমেদ আকুঞ্জি বলেন, এভাবে সার্টিফিকেট পুড়িয়ে ফেলা ঠিক না। পড়াশোনা আসলে চাকরি পাওয়ার জন্য নয়, জ্ঞান অর্জনের জন্য। এ জ্ঞান জীবনের সবক্ষেত্রে কাজে লাগবে। সবার তো চাকরি হয় না। তাই চাকরির চেষ্টার পাশাপাশি উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে। তাহলে এই হতাশাগুলো আর থাকবে না।
জিয়াউর রহমান/আরকে