সুইজারল্যান্ডে ২০০ কেজি সবজি রপ্তানির মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও জাজিরার সবজি এখন ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে। ১০ একর জমির সবজি দিয়ে রপ্তানি শুরু হলেও তা এখন বৃদ্ধি পেয়ে ২০০ একরে দাঁড়িয়েছে। মাত্র তিন মাসে ২০ হাজার ইউরো সমমূল্যের সবজি রপ্তানি করা হয় শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলা থেকে। দিন দিন সবজি রপ্তানি ও চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় জাজিরার কৃষি অর্থনীতিতে বইছে নতুন হাওয়া। যা আগামী দিনে জাতীয় অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

বুধবার (১০ মে) দেখা যায়, রপ্তানির উদ্দেশে জাজিরা উপজেলার মিরাশা চাষি বাজার, ডুবি সায়বর বড় কান্দি, গোপালপুর, সেনেরচর ও বিলাশপুর এলাকায় কৃষকরা উত্তম কৃষি চর্চা পদ্ধতি অবলম্বন করে শসা, ধুন্দল, করলা, পেপে, চিচিংগা, কাকরোল, কচু, লাউ, মিস্টি কুমড়া ও মরিচ উৎপাদন করছেন।

জাজিরা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ৩ তারিখে সুইজারল্যান্ডে ২০০ কেজি সবজি রপ্তানি দিয়ে যাত্রা শুরু হলেও গত এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে সবজি রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ টনে। ইতোমধ্যে জাজিরার কৃষকরা ২০ হাজার ইউরো মূল্যের সবজি রপ্তানি করেছেন। কন্টাক্ট ফার্মিং এর মাধ্যমে কৃষকরা নিরাপদ সবজি আবাদ করছেন।

মিরাশা চাষি বাজার এলাকার কৃষক আব্দুর রহমান হওলাদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমে আমি ১২ শতক জমিতে রপ্তানির উদ্দেশে চাষ শুরু করেছিলাম। এখন প্রায় ৪০ শতক জমিতে কচু চাষ করছি। ফসল রপ্তানি হলে স্থানীয় বাজারের চেয়ে দ্বিগুণ লাভবান হতে পারব।

বিলাশপুরের মুলাই বেপারী কান্দি গ্রামের কৃষক আলফাত মোল্লা ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমে লাউ রপ্তানি করার জন্য বিক্রি করেছি। আমি মাত্র ১০ শতক জমিতে চাষ শুরু করলেও এখন প্রায় দুই বিঘা জমিতে রপ্তানির উদ্দেশে ফসলের আবাদ। কৃষি বিভাগ নিয়মিত তদরকি করেন। উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে চাষকৃত ফসল রপ্তানি হয়।

একই গ্রামের আরেক কৃষক মো. বেলায়েত বলেন, প্রথমে আমি ২০টি লাউ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিক্রি করেছিলাম। এখন আমি রপ্তানির চাহিদামত অনেক সবজি বিক্রি করতে পারব।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ট্রেড লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কাওসার আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা যারা ফুড জাতীয় পণ্য রপ্তানি করি, তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হচ্ছে সরাসরি কৃষক থেকে পণ্য কিনতে হবে। কৃষকদের থেকে সরাসরি রপ্তানিযোগ্য ফসল ক্রয় করায় স্থানীয় বাজারের তুলনায় তারা বেশি দাম পাচ্ছেন। এছাড়া নিজের উৎপাদিত ফসল বিদেশে রপ্তানি হবে এটা জেনে অনেক কৃষকই আনন্দিত হন। দাম বেশি পাওয়ায় জাজিরার কৃষকরা রপ্তানিযোগ্য ফসল উৎপাদন করতে অধিক আগ্রহী হচ্ছেন।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জাজিরা উপজেলার কৃজি জমি পলিযুক্ত হওয়ায় এখানে উৎকৃষ্ট সবজিসহ সব ধরণের ফসল তুলনামূলক বেশি উৎপাদন হয়। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার ৬ মাসের মাথায় গত জানুয়ারিতে জাজিরার সবজি প্রথম রপ্তানি হয়। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে আসছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগের উৎসাহে জাজিরায় এখন ২০০ একর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। জাজিরার ফসলের যে মান, তাতে আগামি দিনে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে রপ্তানির মধ্য দিয়ে জাজিরার অর্থনীতির পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও ভূমিকা রাখবে এখানকার ফসল।

জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, ২০২২ সালে জাজিরার কৃষি ফসল রপ্তানির উদ্দেশে কৃষি বিভাগের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করি। প্রথমে অল্প পরমিাণ সবজি রপ্তানি হলেও এখন তার পরিমাণ ৬ টন হয়েছে। সবজি রপ্তানি প্রক্রিয়াকে গতিশীল করতে জেলা প্রশাসন সব সময় কৃষকদের পাশে থাকবে। আশা করছি জাজিরার সবজি রপ্তানি দেশের বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।

এবিএস