আমের রাজধানীখ্যাত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩-৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আম। জেলার সদর, শিবগঞ্জ ও গোমস্তাপুর উপজেলায় গত বুধবার (১৭ মে) দিবাগত রাত ২টার পর হওয়া ঝড়বৃষ্টিতে ঝড়ে পড়া আম বিক্রি হচ্ছে এই দামে। শুক্রবার (১৯ মে) সকালে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন গ্রাম থেকে স্বল্পমূ‌ল্যে বিক্রি হওয়া আমগুলো কিনে বস্তাভর্তি করে আড়তে নেওয়ার পর পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়। 

এছাড়াও কম মূল্যে এসব আম কিনে ৭-১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে জেলা শহরে। ঝড়ে পড়া আমগুলোর সিংহভাগই অপরিপক্ব। ছোট ও মাঝারি সাইজের এসব অপরিপক্ব আম বিক্রি হচ্ছে ১১০-২০০ টাকা মণ দরে। গ্রামের নারী-পুরুষ ও কিশোর-কিশোরীর কুড়ানো এসব আম পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে আড়তে নিয়ে যান। পরে আড়ত থেকে কিনে ট্রাকযোগে এসব আম যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। 

সদর উপজেলার মহিপুর বাজার, শিবগঞ্জের চককীর্তি, নাচোলের মল্লিকপুর, গোমস্তাপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের মকরমপুর ব্রিজ, কাঞ্চনতলা, বোয়ালিয়া বাজার, ঘাটনগর ও মিনিবাজার মোড়ে গ্রাম থেকে কিনে জড়ো করেন। এরপর বস্তায় ভর্তি করে রাতে ট্রাকযোগে যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে।

আমচাষী ও ব্যবসায়ীরা জানান, বুধবার দিবাগত রাতে জেলাজুড়ে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয়। এসময় গাছ থেকে ব্যাপক অপরিপক্ব আম ঝরে পড়ে। এসব আম গ্রামের মানুষজন বাগান থেকে কুড়িয়ে ৩-৫ টাকা দরে বিক্রি করছে। আমের জাতভেদে একেকরকম দামে বিক্রি হয়েছে এসব আম। ফজলি আম ৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও ক্ষীরশাপাত, বোম্বাই ও বিভিন্ন গুটি জাতের আম বিক্রি হচ্ছে ৩-৪ টাকা কেজি দরে। 

শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গার আমচাষী জিয়াউর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় ৭ বিঘা জমিতে মাঝারি সাইজের প্রায় ৫৭টি আমগাছ রয়েছে। এসব গাছে ঝুলছে আশ্বিনা, ফজলি, ক্ষীরশাপাত, লক্ষণভোগ জাতের আম। হঠাৎ সোমবার রাতে ব্যাপক বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় হয়। এতে অনেক আম পড়ে নষ্ট হয়। এসব আম গ্রামের অনেকেই কুড়িয়ে ৩-৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছে। 

সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের চাঁপাই-মহেশপুর গ্রামের দিনমজুর আপন রেজা নিশান জানান, পরশু ভোররাতের ঝড়ে প্রায় তিন বস্তা আম কুড়িয়েছিলাম। তিন টাকা কেজি করে এসব আম বিক্রি করেছি। বাড়িতে কিছু ফজলি আম রেখে সবগুলো বিক্রি করেছি। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬০০ টাকার আম বিক্রি করেছি।

গোমস্তাপুর উপজেলার বেলাল বাজার এলাকার জুলকার নাইন বলেন, রাতের ঝড়ে সাড়ে ৭ মণ আম কুড়িয়েছিলেন। তবে আম কিনে নেয়ার মানুষ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। পরে জানতে পারলাম, পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসেছে আম কিনবে। তাই তাদের কাছে ৩-৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলাম। তারা আমের মৌসুমে প্রত্যেক ঝড়ের পর আম কিনে নিয়ে যায়। 

পাইকারি ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ আহমেদ জানান, ঝড়ে পড়া আম তেমন কোন কাজে লাগে না। তাছাড়া এখনকার আমগুলো পরিপক্ব নয়। তাই আচার করে অনেকেই। তবে অনেক বেশি আম হওয়ার কারণে বাধ্য হয়েই বিক্রি করতে হয়। আমরাও কম দামে এসব আম পাই। পরে এগুলো রাজধানী ঢাকায় ট্রাকে করে পাঠিয়ে দেই। ঢাকায় এসব আমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনে ৩ ট্রাক আম পাঠিয়েছি। 

তিনি আরও জানান, এখানে ১১০-২০০ টাকা মন দরে কিনলেও ঢাকায় ৪০০-৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হবে। তবে আমের জাত হিসেবে দাম ভিন্ন আছে যেমন আশ্বিনা, লক্ষণভোগ গুটি জাতের আম ৩ টাকা আর ফজলি আম ৫ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেছি। 

আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম পলাশ বলেন, ঝড়ে পড়া আমে দাগ পড়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাই বেশিরভাগ সময় আম পরিপক্ব থাকলে তা স্থানীয় জুস ফ্যাক্টরিতে চলে যায়। তবে এখন যেহেতু আমগুলো অপরিপক্ব হয়ে আছে, তাই জুসের পাল্প করা যাবে না। তাই কম দামে কিনে ট্রাকে করে ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়। সেখানে অনেকেই এই আম আচার ও রান্না করে খাওয়ার কাজে কিনে নেয়। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মাসুদ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুধবার দিবাগত রাতে জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি হয়েছে। ঝড়ে আম ও লিচুর অনেক ক্ষতি হয়েছে। অনেক অপরিপক্ব আম গাছ থেকে ঝড়ে পড়েছে। এসব আম তেমন কোন কাজে না আসায় কম দামে বিক্রি হয়। 

উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলতি বছর ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৭১৬৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে। গত মৌসুমে কৃষি বিভাগ জেলায় আম উৎপাদন হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। ২০২১ সালে জেলায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে আড়াই লাখ মেট্রিক টন এবং তার আগের বছর ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৪৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয়েছে। 

জাহাঙ্গীর আলম/আরকে