চলমান এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণ ফি দিয়েও পরীক্ষা দিতে পারেনি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী নাছিমা। পরীক্ষার দুইদিন আগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশপত্র না আসায় বিষয়টি জানাজানি হয়। টাকা দিয়েও শিক্ষকদের অবহেলার কারণে ফরম পূরণ না হওয়ায় মাশুল গুণতে হচ্ছে নাছিমাকে। গত ১০ মে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের লিখিতভাবে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।

ঘটনাটি শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার সোলাইমানিয়া ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার। এ ঘটনায় এর আগে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে নাছিমার বাবা মজিবল মাঝির বক্তব্যের উদ্ধৃতির ‘মেয়েটাকে পড়াতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শিক্ষকরা তা হতে দিলো না’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ ও প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস নড়েচড়ে বসে। অভিযোগ প্রাপ্তির ৫ দিন পর গত ১৬ মে ভেদরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম অফিস আদেশ হিসেবে একটি পত্রের মাধ্যমে মাদরাসাটির ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুল মান্নানকে ওই শিক্ষার্থীর ফরম পূরণের দায়িত্বে থাকা শিক্ষক ও অন্যান্যদের আলাদা কাগজে বিস্তারিত লিখিত বক্তব্য ৭ দিনের মধ্যে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিতে বলেছেন।

আরও পড়ুন: ‘মেয়েটাকে পড়াতে চেয়েছিলাম, কিন্তু শিক্ষকরা তা হতে দিলো না’

ভেদরগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ কেন হলো না জানতে চেয়ে মাদরাসা সুপারকে নোটিশ দিয়েছি। তিনি পত্র প্রাপ্তির ৭ দিনের মধ্যে লিখিতভাবে ঘটনার বিস্তারিত জানাবেন বলে আশা করছি। তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেওয়া হবে।

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে ১৬ মে পত্র পাঠানো হলেও একই উপজেলার মধ্যে অবস্থিত হয়েও ১৮ মে তারিখে কোনো পত্র পাননি বলে জানিয়েছেন মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার আব্দুল মান্নান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস আমার কর্তৃপক্ষ। নাছিমার বিষয়ে আমি এখনো কোনো পত্র পাইনি। ফরম পূরণ না হওয়ার ঘটনায় কোনো পত্র পেলে বিধি মোতাবেক কাজ সম্পন্ন করব।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নাছিমা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার জীবন তো শেষ করে দিল সহাকারী শিক্ষিকা টিউলিজ রহমান। আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। বাবা গরিব। আমাকে নতুন করে খরচ দিয়ে আর পড়াশোনা করানোর কোনো উপায় নেই আমার বাবার। ফরম পূরণ না হওয়ার ঘটনায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশা করছি সবাই আমার পাশে থাকবেন এবং সকলের সহযোগিতায় আমি ন্যায় বিচার পাব।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের পাঠানো ওই পত্রটির অনুলিপি পেয়েছেন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শ্যামল চন্দ্র শর্মা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরে আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে খোঁজ নিয়েছি। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার সংশ্লিষ্ট মাদরাসার সুপারকে অফিস আদেশ উল্লেখ করে নোটিশ দিয়েছেন। শিক্ষকদের অবহলোর কারণে কোনো শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ না হওয়ার বিষয়টি গুরুতর অপরাধ। আশা করছি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস তদন্ত করে বিষয়টি আমাদের জানাবেন। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে বিষয়টি তুলে ধরব। তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আরকে