চায়ের স্টলে জুয়া-আড্ডা বন্ধে টেলিভিশন না চালানোর নির্দেশ ওসির
ময়মনসিংহের ত্রিশালে রিকশা চালান সেলিম মিয়া। দিনভর রিকশা চালিয়ে তার আয় হয় ৫৫০ টাকা। ওই টাকা দিয়ে বাজার-সদাই করে পরিবারের কাছে ফেরার কথা তার। তবে বাড়ি ফেরার আগে সন্ধ্যার পর চায়ের স্টলে বসেন আড্ডা দিতে। মজে যান আইপিএল খেলায়। খেলা নিয়ে বাজিও ধরেন অন্যদের সঙ্গে। এভাবে বাজিতে হেরে খালি পকেটে বাড়ি ফেরেন সেলিম মিয়া।
শুধু রিকশাচালক সেলিম মিয়া নন, চায়ের দোকানে বসে বাজি খেলে ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন অনেকেই। পরিবারকে সময় না দিয়ে 'আড্ডাবাজিতে' পার করছেন তারা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উঠতি বয়সের যুবকরাও। এমন সব অভিযোগ পেয়ে চা স্টল থেকে টেলিভিশন সরিয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছেন ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন।
বিজ্ঞাপন
গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ঘুরে ঘুরে হ্যান্ডমাইক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন ওসি মাইন উদ্দিন। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ১২ ইউনিয়নেই প্রচারণা চালাবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ওসির এই প্রচারণার প্রশংসা করছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
এ বিষয়ে ওসি মাইন উদ্দিন জানান, চায়ের দোকানগুলোতে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টেলিভিশন চালানোর বিষয়ে অনেকেই আমার কাছে মৌখিক অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত করে চায়ের দোকানে টিভি চালানো বন্ধ করার উদ্যোগ নেই। পরে ১১ মে উপজেলার রামপুর ইউনিয়নে প্রথম প্রচারণা শুরু করি। এখনো প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ১২ ইউনিয়নে প্রচারণা চালানো হবে।
ওসি জানান, চায়ের দোকানগুলোতে টেলিভিশন চালানোর কারণে উঠতি বয়সের যুবকসহ বিভিন্ন লোকজন অহেতুক বসে আড্ডা দেন। আইপিএল খেলা দেখার পাশাপাশি যুবকরা বাজি ধরেন। বাজিতে হেরে টাকার সমস্যা হলে অনেকে বন্ধু বা দোকানদারের কাছ থেকে অধিক সুদে টাকা নিয়ে ঋণগ্রস্ত হন। তারা টাকার জন্য বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। টাকার জন্য পরিবারকেও চাপ দেন। এতে পরিবারও বিপাকে পড়েন।
এছাড়াও অনেকে চায়ের দোকানে বসে রাত ২টা পর্যন্ত আড্ডা দেন। এতে অনেকেই মা, বাবা, স্ত্রী, সন্তানকে সময় দিতে পারেন না। চায়ের দোকানে টেলিভিশন না চললে অহেতুক আড্ডাবাজি হবে না। ফলে যারা শুধু শুধু সময় নষ্ট করতো তারা পরিবারের সদস্যদের সময় দিতে পারবেন।
ওসির এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে ত্রিশাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন বলেন, ওসির নির্দেশনার পর দোকানগুলো থেকে টেলিভিশন সরিয়ে নিয়েছেন দোকানিরা। এতে গভীর রাত পর্যন্ত অহেতুক আড্ডা দেওয়ার অভ্যাস থেকে মানুষ ফিরে আসতে শুরু করেছেন। ওসির এমন উদ্যোগে এলাকায় ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে।
এতে অবশ্য কিছুটা অসন্তুষ্ট চা দোকানিরা। ত্রিশালের বিভিন্ন এলাকার চা স্টল ঘুরে দেখা গেছে, দোকানগুলোতে নেই টেলিভিশন। ফাঁকা রয়েছে টিভি রাখার স্থানও।
ত্রিশাল পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কেরানিবাড়ি মোড়ের রতন চা স্টলের মালিক রতন মিয়া বলেন, আগে আমাদের বেচাকেনা বেশি হতো এখন অনেক কমে গেছে। লোকজনের ভিড় থাকায় আগে রাত ২টা পর্যন্ত খোলা রেখেছি এখন সেই ভিড় নাই তাই রাত ১১টার মধ্যে দোকান বন্ধ করে চলে যাই।
উবায়দুল হক/আরকে