টাঙ্গাইলে জোড়া লাগানো যমজ শিশুর জন্ম হয়েছে। তাদের নাম রাখা হয়েছে হাসান-হোসেন। তবে তাদের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তিত পরিবার। হাসান-হোসেন টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ভাড়রা ইউনিয়নের আগদিঘুলিয়া গ্রামের দিনমজুর আরিফ হোসেন ও সুমাইয়া দম্পতির সন্তান। 

গত ৬ মে রাত আড়াইটার দিকে টাঙ্গাইল শহরের রাজধানী নার্সিং হোমে সিজারের মাধ্যমে জোড়া লাগানো যমজ শিশুর জন্ম দেন সুমাইয়া আক্তার। এর তিন দিন পর গত ৯ মে মাসহ সন্তান দুটিকে বাড়িতে নেওয়া হয়। জোড়া লাগানো যমজ শিশুর জন্ম হওয়ার খবরে তাদের বাড়িতে ভিড় করছেন প্রতিবেশীসহ আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, জোড়া লাগানো যমজ শিশু দুটিকে আলাদা করা সম্ভব। এজন্য অপারেশনের ব্যয় অনেক। পূর্বেও এই ধরনের শিশু অপারেশনের মাধ্যমে আলাদা করা সম্ভব হয়েছে।

আগদিঘুলিয়া গ্রামের বৃদ্ধা নুরজাহান বেগম বলেন, জীবনেও জোড়া লাগানো শিশু দেখিনি। তাই স্বচোখে দেখতে এসেছি। দুই শিশুর বুক একটিই। অদ্ভুত মনে হয়েছে।

প্রতিবেশী আরাফাত বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইউটিউবে দেখেছি জোড়া লাগানো যমজ শিশু। এবার বাস্তবে দেখলাম। এমন ঘটনা আমাদের গ্রামে এই প্রথম। তাই অনেকে উৎসুক হয়ে শিশু দুটিকে দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছে।

যমজ সন্তানের বাবা আরিফ হোসেন বলেন, স্ত্রী যমজ শিশু জন্ম দিয়েছে। কিন্তু তাদের বুক একে অপরের সঙ্গে জোড়া লাগানো। ডেলিভারির আগে আল্ট্রাসনোগ্রামে বাচ্চা যমজ জানতে পারলেও জোড়া লাগানোর বিষয়টি জানা যায়নি। জন্মের পর দেখা যায় তাদের শরীর জোড়া লাগানো। ক্লিনিকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র না থাকায় টাঙ্গাইল সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ৯ মে বাসায় নিয়ে আসি। স্ত্রীসহ সন্তান দুটি এখন সুস্থ্য রয়েছে। বিকল্প পদ্ধতিতে তাদের খাওয়ানো হচ্ছে। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালানোই কষ্টকর। এর মধ্যে যমজ দুই সন্তানের চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। শিশু দুটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে বিত্তবানসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে অনুরোধ করছি।

জোড়া লাগানো দুই সন্তানের মা সুমাইয়া আক্তার বলেন, শরীর জোড়া লাগানো থাকলেও খাবার ও প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা আলাদা। দুজনকে আলাদা শরীরে দেখার খুবই ইচ্ছা। কিন্তু চিকিৎসার ব্যয় বহন করার মতো ক্ষমতা আমাদের নেই। স্বামী যে উপার্জন করেন তাতে সংসার ঠিক মতো চলে না।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. লিংকু রাণী কর জানান, চিকিৎসা শাস্ত্রে এটিকে কনজয়েন্ড টুইন বেবি বা সংযুক্ত যমজ শিশু বলা হয়। এটি অবশ্যই জটিল একটি চিকিৎসা। অস্ত্রোপচার করা গেলে সফলতা সম্ভব। পূর্বে দেশে জোড়া লাগানো বেশ কয়েকটি শিশুর অস্ত্রোপচার হয়েছে।

অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর