নৌকার প্রার্থীর বিষয়ে প্রশ্ন করায় উঠে গেলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় লিখিত ও মৌখিক ব্যাখা জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম। বুধবার (১০ মে) দুপুর দেড়টার দিকে বরিশাল সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ূন কবিরের কার্যালয়ে গিয়ে তিনি ব্যাখ্যা দেন।
এ সময় নৌকার প্রার্থীর নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে অন্যান্য প্রার্থীদের তোলা অভিযোগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা উত্তর না দিয়ে নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে যান। যদিও নৌকার প্রার্থীর প্রসঙ্গ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে এরপরও কথা বলেন এই কর্মকর্তা।
বিজ্ঞাপন
হুমায়ূন কবির বলেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সশরীরে কার্যালয়ে এসে লিখিত এবং মৌখিক জবাব দিয়েছেন। তিনি মৌখিকভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন নির্বাচনী আচরণবিধি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলবেন। তার ব্যাখা অনুসারে নির্বাচনী বিধি সর্ম্পকে অস্পষ্টতা থাকায় তিনি বুঝতে পারেননি। তার বক্তব্যে কমিশন সন্তুষ্ট কিনা তা এই মুহূর্তে বলছি না। তার বক্তব্য আমরা পর্যালোচনা করে নির্বাচনী আইন-বিধি খতিয়ে দেখে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করব।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থীর কয়েক দিন আগে আরেক প্রার্থী শোডাউন করে নগরীতে প্রবেশ করেছে, তিনি বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন- বিষয়টি নির্বাচন কমিশন জানে কিনা জানতে চাইলে হুমায়ূন কবির বলেন, ওই প্রার্থী যে শোডাউন করেছেন তা আমাদের জানা ছিল না। শোডাউনের খবর জানতে পেরে আমরা সেই প্রার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাকে অনুরোধ করেছি, যেন বিধি ভঙ্গ করে কিছু না করেন।
নৌকার প্রার্থী বিভিন্ন স্থানে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন- এ বিষয়ে কমিশনের অবস্থান কী জানতে চাওয়া হলে রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির ‘সরি আর কথা বলব না’ বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে যান।
তবে এরপর আরেক প্রশ্নে তিনি জানান, এখন পর্যন্ত ১৯৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে মেয়র পদে ৯ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৪৮ জন এবং সংরক্ষিত আসনে ৪৮ জন। আমরা ধারণা করছি যারা নির্বাচন করবেন তার অধিকাংশ প্রার্থীই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে ফেলেছেন।
হুমায়ূন কবির বলেন, নগরীর বাসিন্দা, ভোটার, গণমাধ্যমকর্মী এবং আমরা যারা নির্বাচন কমিশনে রয়েছি তাদের সকলের সহায়তায় একটি সুষ্ঠু ভোট সম্পন্ন করব।
এদিকে জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, নগরীতে নৌকার প্রতীক ছাপিয়ে, বিভিন্ন বৈঠক করে, লিফলেট বিতরণ করে নৌকার প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন- যা সম্পূর্ণরূপে নির্বাচনী আচরণবিধিমালা লঙ্ঘন। অথচ রিটার্নিং কর্মকর্তা এসবে খেয়াল করেন না। ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী আচরণবিধি ভঙ্গ বরায় তাকে শোকজ করা হলো অথচ আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে কিছুই বলছে না। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, রিটার্নিং কর্মকর্তা হুমায়ূন কবির আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে কাজ করার জন্য বরিশালে এসেছেন। এজন্য হুমায়ূন কবিরকে প্রত্যাহার করা উচিত। কারণ তিনি থাকলে বরিশালের নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহর নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, যারা বলেন নৌকার প্রার্থী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা করছেন তারা ভুল বলছেন। আমরা কোথাও নির্বাচনী প্রচারণা করছি না, আমাদের প্রার্থী বিভিন্ন পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কারো সঙ্গে মতবিনিময় করাতো নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন না।
প্রসঙ্গত, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত ২০ এপ্রিল এবং মুফতি ফয়জুল করিম ৮ মে বিশাল শোডাউন করে বরিশাল নগরীতে প্রবেশ করেন। সিটি করপোরেশন (নির্বাচনী আচরণ) বিধিমালা-২০১৬ এর বিধি ১১ (২) অনুসারে নির্বাচন-পূর্ব সময়ে যে কোনো প্রকার মিছিল/শো-ডাউন নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, ইসলামী আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিম, জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস বিভিন্ন স্থানে জনসংযোগ করছেন। অন্য মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় এখনো দেখা যায়নি।
তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে। রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের শেষ সময় ২১ মে। আপিল নিষ্পত্তির শেষ সময় ২৪ মে। প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ মে এবং প্রতীক বরাদ্দ ২৬ মে। আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর