আপিলেও জাহাঙ্গীরের মনোনয়ন বাতিলের আদেশ
ঋণ খেলাপির দায়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলমের মনোনয়ন আপিলেও বাতিল করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৪ মে) বিকেলে আপিলের শুনানি শেষে জাহাঙ্গীরের মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশ বহাল রাখেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মো. সাবিরুল ইসলাম।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তার প্রতিনিধি ও ভোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন খান।
বিজ্ঞাপন
তিনি জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম বাতিল হওয়া মনোনয়ন ফিরে পেতে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে আপিল করেন। জাহাঙ্গীর আলমের আবেদন যাচাই-বাছাই করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশ বহাল রেখে আদেশ দিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার।
আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়নপত্র যাচাইকালে বাংলাদেশ ব্যাংক (সিআইডি) থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনে নিউ টাউন নিট ওয়্যার কোম্পানি লিমিটেড ওয়াসা শাখা ঢাকা থেকে গৃহীত একটি ঋণের জামিনদার হিসেবে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমকে ঋণ খেলাপী হিসেবে ঘোষণা করায় তার মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়।
শুনানিকালে আপিলকারীর পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী জানান, তিনি এই ঋণের একজন জামিনদার মাত্র। ইতোপূর্বে উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে পুনঃতফসিলকৃত ঋণ ৭৮.৫৯ কোটি টাকা শ্রেণী বিন্যাসিত হয়। উক্ত পুনঃতফসিলকৃত ঋণের ৩১-০৩-২০২৩ ভিত্তি দায়স্থিতি ১০১.৭৪ কোটি টাকা। ৩য় বার পুনঃতফসিল করণের জন্য গত ১১-০৪-২৩ তারিখে আবেদন করা হয়। তৎপ্রেক্ষিতে শাখা কর্তৃক গত ১১-০৪-২০২৩ তারিখে ৩য় বার পুনঃতফসিলকরণের প্রস্তাবনাটি অনুমোদনের নিমিত্তে প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে ডাউনপেমেন্ট বাবদ ৩.৪০ কোটি টাকা মূল ঋণগ্রহীতা নিউ টাউন নিটওয়্যার কোম্পানি লিমিটেড কর্তৃক গত ১৬-০৪-২০২৩ তারিখে শাখায় পরিচালিত কোম্পানির চলতি হিসাবে জমা করা হয়। বর্তমানে বর্ণিত প্রস্তাবনাটি প্রধান কার্যালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
শুনানিকালে আপিলকারীর পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী একজন আইনজীবী নাকিব সাইফুল ইসলামের প্রত্যয়ন দাখিল করেছেন। দাখিলকৃত প্রত্যয়নপত্রের মর্ম মতে রিট পিটিশন ৫০৮১/২০২৩ এর আদেশে মহামান্য হাইকোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত সিআইবি রিপোর্টে বিবেচ্য প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণের বিষয়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন। যার কার্যকারিতা মূলত ০২/০৫/২০১৩ থেকে শুরু হয়েছে মর্মে বিজ্ঞ আইনজীবীগণ জানান।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ হতে জানানো হয় যে, আপিলকারী যে খেলাপি ঋণের জামিনদার তা বিগত ৩০-০৪- ২০২৩ তারিখ পর্যন্ত পুনঃতফসিল হয়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্টে তার নাম থাকায় মনোনয়নপত্রটি বাতিল করা হয়।
শুনানিকালে উপস্থিত বাংলাদেশ ব্যাংকের (সিআইবি) প্রতিনিধি জানান, আপিল আবেদনকারী সিআইবির হালনাগাদকৃত তালিকা অনুযায়ী অদ্যাবধি ঋণের জামিনদাতা হিসেবে ঋণ খেলাপি মর্মে চিহ্নিত রয়েছেন। ঋণ পরিশোধ বা পুন:তফসিলীকরণ সংক্রান্ত কোনো তথ্য অদ্যাবধি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক থেকে সিআইবিতে পাওয়া যায়নি।
আদেশে আরও উল্লেখ আছে, আপিলকারীর বক্তব্য, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধির বক্তব্য এবং দাখিলকৃত কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করা হলো। পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, খেলাপি ঋণের জামিনদার হওয়ায় ও তার নাম সিআইবির তালিকাভুক্ত হওয়ায় বিগত ৩০-০৪-২০২৩ তারিখে আপিলকারীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। দাখিলকৃত কাগজপত্র পর্যালোচনায় বর্ণিত ঋণটি সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃক নিয়মিতকরণের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ঋণটি ক্লাসিফাইড আছে। মহামান্য হাইকোর্ট থেকে সিআইবি রিপোর্টের বিষয়ে প্রদত্ত স্থগিতাদেশের কার্যকারিতা ০২-০৫-২০২৩ তারিখে শুরু হয়েছে এবং মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময়কালে ৩০-০৪-২০২৩ তারিখে তা কার্যকর ছিল না। বিগত ৩০- ০৪-২০২৩ তারিখে তার মনোনয়নপত্র বাছাইকালে আপিলকারী যে ঋণের জামিনদার ছিলেন সিআইবি তালিকায় তার নাম ঋণখেলাপি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিল এবং সিআইবি সেই তালিকা বৈধ ছিল। সেই বিবেচনায় রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশ বৈধ মর্মেই প্রতীয়মান হয়।
উল্লেখ্য, গত ৩০ এপ্রিল মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে জাহাঙ্গীর আলমের প্রার্থিতা বাতিল করেন গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদুল ইসলাম। জাহাঙ্গীর আলমের উপস্থিতিতে ওই কর্মকর্তা এই আদেশ দেন। তবে তার মা জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
শিহাব খান/আরএআর