গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বরখাস্তকৃত মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, একটি মিথ্যার জয় হয়ে গেছে, সত্যের পতন ঘটেছে। এই মিথ্যাকে যারা সত্য বানিয়েছে আমি তাদেরও বিচার চাই। আমি ১৮ মাস মিথ্যার দায় বহন করছি। এটা থেকে আমি মুক্তি পেতে চাই। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবো। ষড়যন্ত্র করে না সরালে আমি সরে যাব না।

বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে মা জায়েদা খাতুনের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন জাহাঙ্গীর আলম। পরে তার উপস্থিতিতে তার পক্ষে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন তার সঙ্গে আসা গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সাবেক সদস্য আসকর আলী, সাবেক সহ-দপ্তর সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম এবং সাবেক গাছা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির।

এ সময় জাহাঙ্গীর আলম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়েই বসা ছিলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামের গেটের সামনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই শহর এবং নেতাকর্মীদের রক্ষা করার জন্য যা যা করা প্রয়োজন তার জন্য প্রস্তুত আছি। এই কঠিন সময়ে এসে এখানে দাঁড়িয়েছি। ভোট বড় কথা নয়, শহরকে রক্ষা করাই হচ্ছে বড় কথা। নির্বাচন আইনে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হয়, গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হয় আমি সেই পদ্ধতিতে একজন নাগরিক হিসেবে আমার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছি। আমি জানি আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করা হতে পারে। কিন্তু আমি আমার মায়ের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। আমার জীবন থাকতে পারে, নাও থাকতে পারে। কিন্তু আমি চাই আমার মা সুস্থ থাকুক, ভালো থাকুক।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আপনারা জানেন আমি ২০১৮ সালে জনগণের বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র। আমার বিরুদ্ধে কী হয়েছে তা আপনারা সকলেই জানেন। আমার নগরবাসী আমাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত করেছিলেন। কী ঘটনার মধ্যে কী অবস্থায় আজকে আমি এখানে এসে দাঁড়িয়েছি তা সবাই জানে। সে হিসেবে আমি আপনাদের কাছে এবং নগরের প্রত্যেকটি ভোটারের কাছে বলতে চাই, আমি যদি এই শহরের মানুষের উপকার করে থাকি, ভালো কিছু করে থাকি তাহলে তাদের পায়ে হাত দিয়ে বলছি আমি সবার কাছে সহযোগিতা চাই। এই শহরকে রক্ষা করতে হবে। তা না হলে কিছু লোক এই শহরকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে। আমি পাঁচ বছরের নির্বাচিত মেয়র। আমার কিন্তু পাঁচ বছর এখনও শেষ হয়নি। সে হিসেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকল নাগরিকের প্রতি আমি অনুরোধ করবো আমার প্রতি যে অন্যায় ও অবিচার করা হয়েছে, মিথ্যাচার করা হয়েছে, একজন জনপ্রতিনিধির ওপর যদি এসব করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের যেসব বিশ্বাসের জায়গাগুলো আছে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। আমি এই শহরের মানুষের সঙ্গে ছিলাম, আছি ও থাকব।

তিনি আরও বলেন, আমার মা সারাক্ষণ এই শহরের মানুষের জন্য কাজ করেছেন। মা হিসেবে দেখেছেন এই সন্তানের ওপর কীভাবে অত্যাচার করা হয়েছে। সেজন্য আমার মা ফরম নিয়েছেন। আমি আমার মায়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছি। মা যা চাইবেন সন্তান হিসেবে আমি আমার জীবন পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত। আমি আওয়ামী লীগ করেছি। আওয়ামী লীগের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেটি আমি দেখব। আমার মায়ের চোখে যারা পানি এনেছে, তাদের ভবিষ্যতে কী হবে এই শহরবাসীর কাছে আমি তা জানতে চাই। মা যখন আমাকে হুকুম করেছেন তাই আমি এসেছি আমার মায়ের ফরম জমা দেওয়ার জন্য। আর আমার ফরম এনেছেন আমার এলাকাবাসী ও দলীয় লোকজন। আমার মা বলেছেন, এই শহরকে রক্ষা করতে হবে। আমার মায়ের কথায় আমি এখানে এসে দাঁড়িয়েছি। আমি সর্বশেষ সবার সঙ্গে কথা বলে এসেছি, কীভাবে সমাধান করা যায়।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আপনারা দেখেছেন পাঁচ বছরের একটা নির্বাচিত মেয়রকে কীভাবে মিথ্যা বানোয়াট একটি চিঠি দিয়ে কী করা হয়েছে। হয়ত আগামীকালের পর আমার পায়ে শিকল পড়তে পারে। আমাকে গ্রেপ্তার করতে পারে, গুম করতে পারে। আমি দেশবাসী এবং নগরবাসীকে বলে যাই, আমার শহর রক্ষা করতে গিয়ে যা যা ভালো কাজ আছে আমি করেছি। অনেকে ক্ষমতার কারণে মিথ্যাচার করতে পারে, আমাকে ফাঁসিয়ে দিতে পারে। আমার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করতে পারে। এই দেশে অন্যায়কারীরা যেভাবে নাটক সাজায় আমার বিরুদ্ধে হয়তোবা সেভাবেও কিছু করতে পারে। আমি আপনাদের সামনে জীবনে নাও আসতে পারি, আমি এই শহরের মানুষের কোনো ক্ষতি হয় এমন কিছু করিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে আমার এবং এই শহরের মানুষের ক্ষতি করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমি আপনাদের কাছে নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও সুন্দর একটা ভোট চাই। আমি এক ব্যক্তি দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমার থেকে সব ধরনের ছায়া সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর ছায়া, আমার মায়ের ছায়া, নগরবাসীর ছায়া এবং দেশের আপামর জনগণের
ছায়া নিয়ে এখানে গণতন্ত্র এবং অংশগ্রহণমূলক ভোট আমরা চাই।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, এই শহরের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে সত্যটা আপনারা তুলে ধরেন। কোনো মিথ্যা এবং অপবাদ দিয়ে যেন কাউকে ক্ষতি না করা হয়। যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা সবাই ভালো। আমি কারও বিরুদ্ধে যাব না। আমি আমার নীতি, আদর্শ ও মায়ের জায়গায় থাকতে চাই। সেজন্য আমি আপনাদের সবার কাছে সহযোগিতা চাই।

শিহাব খান/এমজেইউ