রংপুুুরে অটোরিকশা ধর্মঘট, দুর্ভোগে যাত্রীরা
রংপুরে শারীরিক প্রতিবন্ধী রিকশাচালক নাজমুল ইসলামকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অর্ধদিবস ধর্মঘট পালন করছে অটোরিকশা শ্রমিকরা। শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। শেষ হবে দুপুর ২টায়।
ধর্মঘটের কারণে রংপুর নগরে সকল ধরনের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, চার্জার রিকশা ও ভ্যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক রয়েছে বাস, ট্রাক, কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য ভারী যান চলাচল।
বিজ্ঞাপন
অটোরিকশা, চার্জার রিকশা বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। নগরে টাউন সার্ভিস ব্যবস্থা না থাকায় পায়ে হেঁটে অনেকেই নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন।
ঢাকা থেকে বাসে আসা মাহমুদ নামে এক যাত্রী জানান, তিনি পরিবারসহ ঢাকা থেকে রংপুরের শাপলা চত্বরে এসে বাস থেকে নেমেছেন। কিন্তু অটোরিকশা শ্রমিকদের ধর্মঘটের কারণে তিনি এখনও গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি।
প্রতিদিন রংপুর নগরীর সিটি বাজার থেকে শাকসবজি কিনে চার্জার অটোরিকশায় বাড়ি ফেরেন চাকরিজীবী মোমেনুর রহমান। বাজারের ব্যাগ হাত নিয়ে হাটতে হাটতে হাঁপিয়ে ওঠা এই ব্যক্তি বলেন, মর্নিং ওয়াক শেষে বাজার থেকে টাটকা শাক-সবজি কিনেছি। অটোরিকশা চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার হেঁটে আসলাম। একটু কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কিছুই করার নেই।
ব্যাটারিচালিত অটোচালক মুন্না ইসলাম ভোরে গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিল ঢাকা থেকে যাত্রী পরিবহনের জন্য। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বাঁধায় কামারপাড়া কোচ স্ট্যান্ড এলাকায় গিয়ে অটোটি বন্ধ রেখেছেন। এই অটোচালক বলেন, সাধারণ মানুষেরও কষ্ট হচ্ছে। আমাদেরও কষ্ট হচ্ছে। একদিন অটো বন্ধ থাকলে কিস্তির টাকা দিতে পারি না।
এদিকে, সকালে নগরীর শাপলা চত্বর, পার্কের মোড়, আশরতপুর, লালবাগ, সাতমাথা এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে অটোচালক ও শ্রমিকেরা। এ সময় তারা রিকশাচালক নাজমুল হত্যার সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
মহানগর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি হামিদুল ইসলাম বলেন, আমরা হতবাক হয়েছি। রিকশা চুরির অপবাদ দিয়ে প্রতিবন্ধী রিকশাচালক নাজমুল ইসলামকে নিজের বাসায় নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলী। এই ঘটনা নির্মম ও হৃদয়বিদারক। হত্যা করে রিকশাচালক নাজমুলের মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে সেটাকে আত্মহত্যা হিসেবে প্রচারের চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা ওই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
গত বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে রংপুর নগরীর আশরতপুর কোর্টপাড়ার একটি বাড়ি থেকে প্রতিবন্ধী রিকশাচালক নাজমুল ইসলামের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন রংপুর পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারে কর্মরত কনস্টেবল হাসান আলী।
নিহত নাজমুল ইসলাম লালমনিরহাটের মুস্তফি অতিপুর এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে। তিনি রংপুরে আশরতপুর ঈদগাহপাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে বসবাস করছিলেন। তার পায়ে সমস্যা থাকায় পুলিশ কনস্টেবল হাসান আলীর গ্যারেজ থেকে নেয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা ভাড়ায় চালাতেন। ওই রিকশাটি গত মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) চুরি হয়ে যায়। এ নিয়ে রিকশাচালক নাজমুলকে দুই দফায় মারধর করেন হাসান আলী। এলাকাবাসীর সহায়তায় তাজহাট থানা পুলিশ ওই প্রতিবন্ধী রিকশাচালককে উদ্ধার করে। পরে কনস্টেবল হাসান আলী আবার রাস্তা থেকে রিকশাচালক নাজমুলকে ধরে নিয়ে গিয়ে তার নিজ বাড়িতে বেধড়ক পেটায়।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে স্থানীয়দের কাছে নাজমুল আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। বিকেলে কনস্টেবল হাসানের কোর্টপাড়ার ভাড়া বাসা থেকে নাজমুলের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় হাসান আলী ও তার স্ত্রী সাথী বেগমের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ এনে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী। ওইদিনই এলাকাবাসীর তোপের মুখে পড়ে স্ত্রীসহ কনস্টেবল হাসান আলীকে আটক করে থানায় নেয় পুলিশ। পরে রাতে নিহত নাজমুলের স্ত্রী শ্যামলী বেগম বাদী হয়ে হাসান ও তার স্ত্রীকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
গত বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুর দুইটার দিকে আসামিদের আদালতে হাজির করে পাঁচদিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফুল ইসলাম। পরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ফজলে ইলাহী খান শুনানি শেষে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। রোববার (২৭ ডিসেম্বর) শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
এসপি