অবশেষে মোটরসাইকেল চালকদের জন্য উন্মুক্ত হলো পদ্মা সেতু। শর্ত সাপেক্ষে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৬টা থেকে ছয় শর্তে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে।

বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন জাজিরা টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন।

এর আগে, ঈদযাত্রার সুবিধার্থে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও শরীয়তপুরের সাত্তার মাদবর-মঙ্গল মাঝির ঘাটে ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা করেছিল কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতু দিয়ে প্রায় ১০ মাস পর মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হওয়ায় আবারও ফাঁকা পড়ে রয়েছে ফেরি। সেতু চালু হওয়ার পর প্রথম বারের মতো বন্ধ হয়েছিল ফেরি চলাচল। এবার এখনো আনুষ্ঠানিক বন্ধ ঘোষণা করেনি কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা যায়, ঈদযাত্রীদের সুবিধার জন্য গত সোমবার (১৭ এপ্রিল) বরিশালের ভোলা থেকে শিমুলিয়া ঘাটে পৌঁছায় ফেরি কলমিলতা ও কুঞ্জলতা। পরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেল ও যাত্রী নিয়ে শিমুলিয়া ও সাত্তার মাদবর-মঙ্গলমাঝির ঘাটে চলাচল শুরু করে ফেরি দুটি। আজ থেকে সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হওয়ায় ফেরিতে কোনো মোটরসাইকেল আরোহী যাত্রী হিসেবে পদ্মা পার হচ্ছেন না।

বাইকার হাফেজ আল আমিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, যে ছয়টি শর্ত কর্তৃপক্ষ দিয়েছে, তা মেনেই আমরা পদ্মা সেতু পাড় হব। দুই দিন আগে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছিল বাইকারদের জন্য। কিন্তু এখন সেতু দিয়ে পাড় হতে পারব বলে ফেরিতে যাইনি।

আরেক বাইকার মিরাজুল ইসলাম বলেন, ফেরি দিয়ে যাতায়াত করতে সময় বেশি লাগে। নদীতে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, সময় বেশি লাগে। তাছাড়া পদ্মা সেতুর টোল ১০০ টাকা আর ফেরির ভাড়া ১৫০ টাকা। সেতুতে সব দিক মিলিয়ে সুবিধা বেশি। সেতু থাকতে ফেরি দিয়ে যাতায়াতের কোনো মানে নেই।

বিআইডব্লিউটিসির বাংলাবাজার ও সাত্তার মাদবর-মঙ্গল মাঝির ঘাটের ব্যবস্থাপক জামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হওয়ায় ফেরিতে কোনো গাড়ি বা যাত্রী নেই বলে ফেরি ঘাটে পড়ে রয়েছে। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত কলমিলতা ও কুঞ্জলতা ঘাটেই থাকবে।

প্রসঙ্গত, গত বছর দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয় পদ্মা সেতু সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু সেতু উন্মুক্ত হওয়ার পরে দুইজন মোটরসাইকেল আরোহী এক্সিডেন্ট করে মৃত্যুবরণ করায় ও বাইকারদের উচ্ছৃঙ্খলতার জন্য সেতু কর্তৃপক্ষ পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর দুর্ভোগের শেষ ছিল না বাইকারদের। কখনো ঝুঁকি নিয়ে ট্রলার যোগে, কখনো সেতু কর্তৃপক্ষকে ফাঁকি দিয়ে মালবাহী ট্রাকে পদ্মা নদী পাড় হতেন বাইকাররা। সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হওয়ার পরে বাইকাররা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের দাবিতে বিভিন্ন সময় পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা, শরীয়তপুর ও ঢাকায় মানববন্ধন করেছে। তবুও সরকার তাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। এবার ঈদ উপলক্ষ্যে শর্ত সাপেক্ষে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য কর্তৃপক্ষ যে ছয়টি শর্ত দিয়েছেন তা যদি যথাযথ মানেন বাইকাররা তাহলে ঈদের পরেও সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল অব্যাহত থাকবে। অন্যথায় আবারও সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ হতে পারে।

ওএফ