আদালতের নির্দেশে ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব ফিরে পেয়ে যমুনার চরের হতদরিদ্র ২০ হাজার মানুষকে বিনামূল্যে ২ দিন নৌকায় নদী পার করার ঘোষণা দিয়েছেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জগতলা (কৈজুরি-সোনাতনী) খেয়াঘাটের ইজারাদার আবু বক্কার সিদ্দিক।

মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) দুপুর থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত খেয়াঘাট দিয়ে বিনামূল্যে মানুষেরা নদী পার হবেন। পরে বৃহস্পতিবার থেকে পূর্বের ভাড়ায় এই খেয়া পারাপার চলবে। তার এমন ব্যতিক্রমী ঘোষণায় আনন্দিত এলাকাবাসী।

ঘাটের ইজারাদার আবু বক্কার সিদ্দিক বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আমি এই ঘাট পরিচালনা করে আসছি। আমার বাবা মোজাহার আলী মোল্লাও এ ঘাটের একজন মাঝি ছিলেন। তারপরেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন দ্বিতীয় দরদাতা সাইফুল ইসলামের যোগসাজসে মিথ্যা তদন্তের মাধ্যমে আমাকে বাদ দিয়ে গত ৩ এপ্রিল দ্বিতীয় দরদাতাকে ইজারা প্রদান করেন। এতে সরকার ১ লাখ ৯০ হাজার ১ টাকা রাজস্ব বঞ্চিত হয়। এতে আমিও আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হই।

তিনি আরও বলেন, এর সুবিচার প্রাপ্তির জন্য আমি গত ১২ এপ্রিল শাহজাদপুর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করি। বিচারক সোহেল রানা আমার মামলাটি আমলে নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল শুনানি শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন ও ভাটপাড়া গ্রামের শহিদ আলীর ছেলে দ্বিতীয় দরদাতা সাইফুল ইসলাম মাঝিকে শোকজ প্রদান করেন। সেই সঙ্গে বিচারক এ মামলার শুনানিকাল পর্যন্ত ওই খেয়া ঘাটের ইজারা কার্যক্রম স্থগিতের আদেশ প্রদান করেন।

তিনি বলেন, এ আদেশের কপি ওই দিনই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছে দেওয়া হয়। তারপরেও আদালতের আদেশ অমান্য করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দ্বিতীয় দরদাতাকে কার্যাদেশ প্রদান করেন।

অপরদিকে, আদালতের দেওয়া ২ কার্যদিবস পার হলেও বিবাদীগণ শোকজের কোনো জবাব না দেওয়ায় আদালত সোমবার দুপুরে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আমাকে খেয়াঘাট ইজারা প্রদানের নির্দেশ দিলে আজ দুপুরে শাহজাদপুর থানা পুলিশের একটি দল ঘাট এলাকায় শতশত মানুষের সামনে আমাকে ঘাটের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে। আমি ঘাট পরিচালনার দায়িত্ব বুঝে পেয়ে আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উপজেলার সোনাতনী ইউনিয়নের যমুনা নদীর দূর্গম চরের হতদরিদ্র প্রায় ২০ হাজার মানুষের ২ দিনের খেয়া পারাপারের ভাড়া ফ্রি করে দিয়েছি। এ ঘোষণা মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হয়ে বুধবার রাত পর্যন্ত চলবে। বৃহস্পতিবার থেকে তারা পূর্বের ভাড়ায় খেয়া পার হবেন।

আবু বক্কার বলেন, অবৈধভাবে ঘাটের ইজারা পেয়েই সাইফুল মাঝি ভাড়া বাড়িয়ে দেন। ফলে যমুনা নদীর দূর্গম চরের হতদরিদ্র ২০ হাজার মানুষকে খেয়া পারাপারে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়। ভাড়া কমিয়ে দেওয়ায় তারা আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে।

এ ব্যাপারে শাহজাদপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতের নির্দেশে আমরা গিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতা আবু বক্কার সিদ্দিককে ঘাটের ইজারা পরিচালনার কার্যভার বুঝিয়ে দিয়ে এসেছি। সেই সঙ্গে উভয়পক্ষকে ঘাটে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখতেও নির্দেশ দিয়েছি।

দ্বিতীয় দরদাতা সাইফুল ইসলাম মাঝি বলেন, উপজেলা প্রশাসন কাগজপত্র যাচাই বাছাই করে আমাকে ঘাট বরাদ্দ দিয়েছিল। এখন আদালত আবু বক্কারকে ঘাট দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ায় সেখান থেকে সরে এসেছি। এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও তিনি জানান।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাদিয়া আফরিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

শুভ কুমার ঘোষ/এবিএস