ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে বাড়ছে যানবাহনের চাপ
ঈদযাত্রার শুরুতেই চাপ বেড়েছে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রায়। দিনে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) সন্ধ্যার পর থেকেই চাপ বাড়তে শুরু করেছে। সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশ্যে যাওয়া বাসসহ নানা যানবাহন। অপরদিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে তেমন ভিড় দেখা যায়নি।
এদিকে ইফতারের আগে থেকেই ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের আনাগোনা বাড়তে থাকে চন্দ্রাসহ আশপাশের এলাকায়। এদের বেশিরভাগই গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানার শ্রমিক। ইফতারের পরপরই তারা বিভিন্ন বাসে চেপে বসেছেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের বাসগুলোও দূরপাল্লার সড়কে যাত্রী পরিবহন করছে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও ঈদে ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি দূর করে ঘরে ফেরা নিশ্চিত ও যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন জেলা ও হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা।
পরিবার নিয়ে গাজীপুরের মৌচাক এলাকায় বাস করে স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন একরামুল হক রকি। কারখানায় ঈদের ছুটি ঘোষণার একদিন আগে ছুটি নিয়ে রওনা হয়েছেন স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে। চন্দ্রা এলাকায় কথা হয় তার সঙ্গে।
রকি বলেন, বুধবার সারাদিন কাজ শেষে কারখানা ছুটি হবে বিকেলে। একদিনের ছুটি অগ্রিম নিয়ে ভোগান্তি এড়াতে পরিবার নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। সারা বছর অনেক স্বজনের সঙ্গে দেখা হয় না, সবাই আশায় থাকি ঈদে এক সঙ্গে দেখা হবে, আনন্দ হবে। অনেক আশা নিয়ে যাচ্ছি ঈদ করতে।
ঈদযাত্রায় ভোগান্তির কথা চিন্তা করে আগেই পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়েছেন শফিপুরের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার কারখানার শ্রমিক আবু রায়হান। তিনি জানান, বরাবরই ঈদ যাত্রায় ভোগান্তি হয়, অতিরিক্ত ভাড়ার পাশাপাশি সন্তান নিয়ে বাসে যাতায়াত করতে কষ্ট হয়। তাই দুই সন্তানের স্কুল ছুটির পরই পরিবারকে গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। আগামীকাল ডিউটি শেষে তিনিও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবেন।
বগুড়াগামী আলম পরিবহনের চালক লিয়াকত আলী। তিনি জানান, এখনো ঈদে ঘরে ফেরা মানুষ বের হননি। ইফতারের পর ভিড় বাড়লেও কাঙিক্ষত যাত্রী পাচ্ছেন না তারা। আগামীকাল অনেক কারখানা ছুটি হবে। তখন ভিড় আরও বাড়বে।
আরেক বাসচালক মমিনুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে আরও ভিড় বাড়বে। অনেকেই তারাবির নামাজ শেষে রওনা হবেন গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। এ ভিড় ঈদের আগ পর্যন্ত থাকবে।
হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের অধীনে ৬৮০ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। যে কোনো স্থানে গাড়ি বিকল হওয়া মাত্রই গাড়ি সরিয়ে নিতে ১১টি রেকার কাজ করছে। যে কোনো অবস্থায় যানজটমুক্ত ঈদযাত্রা করতে হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের অধীন ১৮টি থানা পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছিনতাইকারী ও মলমপার্টিসহ যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স কাজ করছে বলে তিনি জানান।
গাজীপুরের পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম বলেন, ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ইতোমধ্যে আমাদের ডিউটি শুরু হয়ে গেছে। পুরো ঈদযাত্রায় ৫০০ এর ওপরে ট্রাফিক কন্ট্রোলের জন্য পুলিশ সদস্যের দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। সাদা পোষাকের পুলিশ, ডিবি পুলিশসহ থানা পুলিশ ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমাতে কাজ করবে। এছাড়াও ঈদযাত্রায় মলম পার্টি, ছিনতাইকারী রোধে জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পুলিশ নিয়োগ করা হয়েছে। তারা সাদা পোশাকে মানুষের মাঝে থাকবে। চন্দ্রা হলো উত্তরবঙ্গের মূল প্রবেশদ্বার। শুধু চন্দ্রাতে দুই শিফটে ২০০ এর ওপরে পুলিশ সদস্য যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে। সব মিলিয়ে এবারের ঈদযাত্রায় ভোগান্তি থাকবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
শিহাব খান/আরএআর