পলিথিনে অবৈধভাবে গ্যাস ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে ঘরের বারান্দায়

জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে শত শত বাড়িতে বিশাল পলিথিনের বেলুন বানিয়ে রান্নার গ্যাস (মিথেন গ্যাস) জমিয়ে রাখা হচ্ছে। রাতের বেলায় এই গ্যাস জমিয়ে রেখে দিনের বেলায় রান্না করছেন এসব গ্রামের হাজারো মানুষ। কিন্তু প্রচণ্ড দাহ্য এই গ্যাস থেকে যেকোনো সময় ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। 

আরও আশ্চর্যের বিষয় হলো, ওই ইউনিয়নে কোনো বৈধ গ্যাসের লাইন নেই বলে দাবি করছেন খোদ তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির কর্মকর্তারা। আর উপজেলা প্রশাসন এই অভিনব কায়দায় গ্যাস জমিয়ে রান্না করার খবরে রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেছে।

এদিকে বিপজ্জনক জেনেও শুধু ওই এলাকার যারা এ কাজ করছেন, তারা অবলিলায় স্বীকারও করেছেন, এসব গ্যাসলাইনের সবই ছিল অবৈধ সংযোগ নেওয়া।

রোববার (২১ মার্চ) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের খামারপাড়া, তালাশকুর ও নগরপাড়া এলাকায় দেখা গেছে এমন অভিনব দৃশ্য। বিভিন্ন বাড়ি-ঘরের ভেতর, বারান্দায়, ছাদে, গাছে রংবেরঙের বিশাল পলিথিনের বেলুন বিশেষভাবে রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। দুদিক থেকে পলিথিনের এসব বেলুনের ভেতরে প্লাস্টিকের পাইপ ঢোকানো। পাইপের এক মুখ গ্যাসের চুলার সঙ্গে, অন্য মুখ গ্যাসের সঞ্চালন লাইনের সঙ্গে যুক্ত। এভাবে পলিথিনে গ্যাস সংরক্ষণ করে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন শত শত মানুষ। 

খামারপাড়া এলাকার বেশ কয়েকটি বাড়িতে কথা বললে তারা জানান, সারাদিনে গ্যাস আসে না। তাই গভীর রাতে এ পলিথিনে গ্যাস ভরে রাখি। সেটা দিয়ে দিনের বেলায় রান্না করি। একবার গ্যাস ভরে রাখলে দুই দিন রান্না করা যায়। আর গ্যাসভর্তি পলিথিন বেলুনটা থাকে ঘরের আড়ার ওপরে।

পলিথিনে অবৈধভাবে গ্যাস ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে

তারা আরও জানান, পলিথিন, রশি, পাইপ ও কিছু যন্ত্রপাতির সাহায্যে এটা বানানো হয়েছে। বাদল নামের এক লোকের জন্য ১ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। গভীর রাতে যখন বেশি গ্যাস আসে, তখন পাইপের একটা মুখ খুলে দিলে গ্যাস ভরে যায়। পুরো পলিথিন গ্যাসে ভরে গেলে আবার পাইপের মুখ বেঁধে রাখি। সকালে চুলা জ্বালালে বেলুনের জমে থাকা গ্যাস দিয়ে রান্না করা যায়।

এলাকাবাসী জানান, ২০১৫ সালের শুরুতে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ১৫টি গ্রামে অবৈধ গ্যাস সঞ্চালন লাইন টানা হয়। এ লাইন থেকে সংযোগ নেওয়ার জন্য প্রতিটি ঘর থেকে এককালীন ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন স্থানীয়রা। যারা গ্যাসের সংযোগ নিজের বাড়িতে নিয়ে ব্যবহার করছেন, তাদের কেউ এখন পর্যন্ত কোনো বিল পরিশোধ করেননি।

ফলে কেউ গ্যাসের চাপ বাড়ানোর জন্য তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডকে অভিযোগ দিতে পারেন না। এ জন্য ঝুঁকি জেনেও ১৫টি গ্রামের সাধারণ মানুষ কয়েক শতাধিক বাড়িতে অভিনব কায়দায় পলিথিনে গ্যাস সংরক্ষণ করে রান্নার কাজে ব্যবহার করছেন।

অবৈধ গ্যাসলাইন কীভাবে পেলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে গ্রামবাসী জানান, স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি (নাম জিজ্ঞাস করলে বলেন, জানি না) সংযোগের জন্য প্রতি ঘর থেকে ১২ থেকে ১৫ হাজার করে টাকা নিয়েছে। তারাই বলেছে পরে বৈধ করে দেবে। তবে এখন পর্যন্ত লাইন বৈধ করেনি। আর তিতাস থেকে কোন লোক যোগাযোগ করেননি।

এ ব্যাপারে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সোনারগাঁও জোনাল বিপণন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. মিজবাহ-উর-রহমান ঢাকা পোস্টকে জানান, এভাবে গ্যাস সংরক্ষণ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কায়েতপাড়া এলাকায় আমাদের বৈধ কোনো গ্যাসলাইন নেই। যারা ব্যবহার করছে, তা পুরোপুরি অবৈধ। আমরা সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করা হবে। যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ নুসরাত জাহান বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। এটা কীভাবে সম্ভব। অচিরেই আমরা অভিযান পরিচালনা করব।

রাজু আহমেদ/এনএ