৫৩ বছর পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে পাবনা
৫৩ বছর পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে পাবনা। জেলার ঈশ্বরদীতে আজ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার (১৭ এপ্রিল) বিকেলে বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন পাবনার ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের সহকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন।
তিনি বলেন, ১৯৭০ সালের পর অর্থাৎ ৫৩ বছর পর আজকে (১৭ এপ্রিল) ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আমাদের তথ্যমতে, ১৯৭০ সালের পর আজকেই পাবনায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। পাকিস্তান আমলে পাবনার ঈশ্বরদীতে আবহাওয়া অফিস প্রতিষ্ঠা করা হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করার ইতিহাস নেই। গত বছরের ১৫ এপ্রিল তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, প্রচণ্ড দাপদাহ ও চৈত্রের খরায় প্রতিদিন গাছ থেকে ঝরে পড়ছে অপরিপক্ক লিচু ও আমের গুটি। প্রাকৃতিক কারণেই এবার লিচুর জন্য বৈরি সময়। লিচু নিয়ে রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন ঈশ্বরদীর লিচু চাষিরা। কৃষকরা জানান, যখন মুকুল থেকে লিচু গুটি হয়ে উঠেছে তখন প্রচণ্ড গরমে লিচু ও আমের গুটি ঝরে পড়তে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের জমিতে পানি দিতেও হিমসিম খেতে হচ্ছে কৃষকদের।
অন্যদিকে এই তীব্র দাপদাহের মধ্যেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কোনো কোনো এলাকায় ১৪-১৫ ঘণ্টা লোডশেডিংয়েরও খবর পাওয়া গেছে। এতে শিল্প-কারখানায় উৎপাদন কমে যাওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে প্রতিষ্ঠান মালিকদের। এমনকি, ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটগুলোতে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
পাবনা শহরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, সিডিউল না মেনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং সবাইকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। ঈদের কেনাকাটায় মার্কেটে এসে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
গয়েশপুর গ্রামের আফজাল হোসেন বলেন, দাপদাহে গাছ থেকে কাঁচা লিচু ও আমের গুটি ঝরে পড়ছে প্রতিদিন। এতে এ বছর লিচু ও আমের ফলনে বিপর্যয় ঘটতে পারে। ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছি। বর্তমানে সেচ দিয়েও জমিতে পানি দিতে পারছি না। জমিতে এখন সেচ দিলে একটু পরেই পানি থাকে না।
ঈশ্বরদীর আওতাপাড়ার লিচু চাষি হোসেন মিয়া বলেন, ১০ বিঘা জমিতে আমার লিচুর আবাদ রয়েছে। কিন্তু এই খরায় লিচুর গুটি ঝরে যাচ্ছে। প্রতিদিন পানি দিয়েও গুটি ঝরে যাওয়া রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
রিকশাচালক মঈন উদ্দিন বলেন, পুরো জামা-কাপড় গোসল দেওয়া ভেজা কাপড়ে পরিণত হয়ে গেছে। মনে হচ্ছে কখন যেন জানটাই বের হয়ে যায়। কিন্তু বাড়িতে বসে থাকলে তো আর জীবন চলবে না, তাই রিকশা নিয়ে বের হয়েছি। এখন কপালে যা থাকে তাই হবে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আসমা খান বলেন, জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে প্রতিদিনই হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছে মানুষ। সেই সঙ্গে ডায়রিয়াও হচ্ছে। শিশুদের সঙ্গে সঙ্গে বৃদ্ধরাও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এ সময় সবাইকে বেশি বেশি খাবার স্যালাইন ও পানি জাতীয় জিনিস খাওয়ার কথা বলেন তিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, তীব্র খরা চলছে। আর এই গরমে ঈশ্বরদীসহ পাবনার সবকটি উপজেলার লিচু ও আমের গুটি ঝড়ে যাচ্ছে। কৃষকদের সাব-মার্সিবলের মাধ্যমে জমিতে সেচ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অবশ্যই সেই সেচটা রাতে দিতে হবে। চলতি মৌসুমে বোরো ধানের জমিতে সব সময় দুই থেকে তিন ইঞ্চি পানি রাখতে হবে। পাশাপাশি বোরো ধানের জমিতে বিঘা প্রতি পাঁচ কেজি পটাশ সার প্রয়োগ করতে হবে।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের কর্মকতা নাজমুল হক বলেন, পাবনায় তীব্র তাপ প্রবাহ চলছে। দেশের মধ্যে আজ ঈশ্বরদীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বয়ে যাচ্ছে। এর আগে ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ইতিহাসে ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বয়ে যায়নি। আজকের তাপমাত্রাই এই আবহাওয়া অফিসের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন স্থানীয়রা। সর্দি-কাশিতে ভুগছেন এ অঞ্চলের মানুষ।
রাকিব হাসনাত/এবিএস