দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ভাই নিহত, আরেক ভাই নিখোঁজ
বরিশালের মুলাদীতে প্রতিপক্ষ গ্রুপের হামলায় এক ভাই নিহত ও আরেক ভাই নিখোঁজ বলে জানা গেছে। সোমবার (১০ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছবিপুর ও বাটামারা ইউনিয়নের সীমানার চাকলা বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
সোমবার দিবাগত রাত পৌনে ১টা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে পুলিশ যেতে পারেনি বলে জানিয়েছেন মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তুষার কুমার মন্ডল। নিহত হেলাল বেপারী (৪০) উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড পূর্ব তয়কা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম বেপারীর ছেলে।
বিজ্ঞাপন
বাটামারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. সালাহ উদ্দিন অশ্রু জানিয়েছেন, এ ঘটনায় হেলালের ভাই কামাল বেপারী নিখোঁজ।
তিনি বলেন, হাজী ও আকন গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। আগের কি নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত তা বলতে পারব না। তবে রাত সাড়ে ৮টার দিকে ছবিপুর ও বাটামারা ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী পূর্ব তয়কা বা চাকলা বাজার এলাকায় দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে হেলাল বেপারী নিহত হয়েছে ও কামাল বেপারী নিখোঁজ রয়েছেন।
গ্রামবাসী ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ৭/৮ বছর পূর্বে হাজী গ্রুপ ও আকন গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে হাজী গ্রুপের আনিস নামে একজন নিহত হয়। এরপর থেকে এলাকায় আসতে পারেনি হাজী গ্রুপের ওই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য আলম বেপারীসহ লোকজন।
আলম বেপারী এলাকায় আসার জন্য পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে যোগোযোগ করে। এরপর তারা ৩০/৩৫ জন দুটি ট্রলারে করে বাজারে আসে। তখন সেখানে পুলিশ ছিল। পরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো শুরু করে। এ সময় আকন গ্রুপের সদস্য হেলালকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করে। আর কামাল নিখোঁজ রয়েছে।
সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মাহিমা বেগমের স্বামী আলী হোসেন জানান, তার বাড়ির সামনেও বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ সময় তার স্ত্রী প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করা হয়।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মজিবুর রহমান সরদার জানান, আধিপত্য নিয়ে স্থানীয় কবিরাজ, আকন, হাওলাদার ও হাজী গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে। তবে এ চারটি গ্রুপ আবার দুটি গ্রুপে বিভক্ত।
তিনি জানান, দাদন হাওলাদারের ভাই আনিছ হাওলাদার কয়েক বছর আগে খুন হন। ওই ঘটনায় মামলার পর দীর্ঘ সময় এলাকা ছাড়া ছিলেন হেলাল ও কামাল বেপারী। ১০-১৫ দিন আগে তারা এলাকায় আসেন। সোমবার সকালে দাদন হাওলাদারের পক্ষে কিছু লোক হেলমেট পড়ে ঢাকা থেকে লঞ্চ যোগে গৌরনদীর টরকি হয়ে এলাকায় আসেন। শুনেছি, এলাকায় আসার আগে পুলিশের সহায়তাও চেয়েছিল তারা। এলাকায় আসার পরেই উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।
তিনি বলেন, ঘটনার সময় বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। পরে জানতে পারি হেলাল বেপারী খুন হয়েছে এবং কামাল বেপারী নিখোঁজ রয়েছে। এরা দুজন আপন ভাই।
এ বিষয়ে রাত পৌনে ১টায় মুলাদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, ঘটনাস্থলে যাচ্ছি, এখনো পৌঁছাইনি। বিস্তারিত এখন কিছুই বলতে পারব না। শুনেছি একজন নিহত ও একজন নিখোঁজ রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশালের পুলিশ সুপার ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে ডিবি ও পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলের উদ্দেশে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে স্থানীয়রা বলেছেন, ঘটনার সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে থাকলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আনতে পেরে তারা চলে যায়। পরে রাতে আবার পুলিশ সেখানে যায়।
সৈয়দ মেহেদী হাসান/ওএফ