মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান

২৫ মার্চ কালোরাতে পাক বাহিনী রাজারবাগ আক্রমণ চালায়। ঘুমন্ত নিরস্ত্র প্রভিশনাল রিজার্ভ ফোর্স সদস্যদের নির্বিচারে হত্যা করে। তখন আমরা বাঙালি প্রভিশনাল রিজার্ভ ফোর্স সদস্যরা পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করি। পাক বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের কাছে প্রতিরোধ যুদ্ধে আমরা টিকতে না পেরে পিছু হটি। রাজারবাগ থেকে পালিয়ে এসে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি।

পরে বানপুরে ১শ’ যুবকের সাথে বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে সম্মুখসমরে অংশ নেই। জীবন বাজি রেখে প্রথম প্রতিরোধযুদ্ধে অংশ নিয়ে শেখ আকরামুজ্জামান আজও পাননি মুক্তিযোদ্ধার সনদ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা গ্রামে মধুমতি নদীর পাড়ে নিজ বাড়িতে আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন মুক্তিযুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য শেখ আকরামুজ্জামান(৭৩)।

তিনি আরও বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর ভারতের ক্যাম্প থেকে পাওয়া সনদপত্র ঢাকা পুলিশের রিজার্ভ অফিসারের কাছে জমা দেই। সেখান থেকে আমার সনদ হারিয়ে যায়। তারপর চাকরিতে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা হয়। সর্বশেষ মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ের সময়ে আমি সাতক্ষীরায় কর্মরত ছিলাম।

আমার অজান্তেই এ কাজ সম্পন্ন হয়। তাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা সনদ না থাকায় ছেলে-মেয়েদের সরকারি চাকরি দিতে পারিনি।’

আকরামুজ্জামানের পাওয়া সম্মাননা স্মারক

আকরামুজ্জামান বলেন, ‘প্রথম প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগ আমাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আমাকে এককালীন ৪ লাখ টাকার অনুদান দেওয়া হয়েছে। অবসর গ্রহণ করার পরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখনো পুলিশের রেশন পাচ্ছি।
সনদ পেলে ছোট ছেলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সরকারি চাকরি করার সুযোগ পেতো। আমি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ভাতা পাই না। ভাতা পেলে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাকী জীবনটা ভালোভাবে কাটাতে পারতাম। সনদ পেলে মরেও শান্তি পেতাম।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামান মুক্তিযুদ্ধের প্রতিরোধ পর্বে দেশে ফিরে যশোর জেলার বেনাপোল সীমান্তের পেট্রাপোল, পুটখালী ও রঘুনাথপুরে পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে অংশ নিয়ে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি ফের পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৭২ সালে এসএসসি পাস করেন তিনি। পুলিশের এএসআই হিসেবে পদোন্নতি পান।

২০০৪ সালে রাজবাড়ী জেলা পুলিশে কর্মরত অবস্থায় চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। স্বাধীনতার ৪৯ বছর পরও মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র পাননি শেখ আকরামুজ্জামান। জাতির অকুতোভয় এ সৈনিক শেষ জীবনে এসে মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র ও ভাতা পেতে চান।

সাংবাদিকদের সম্মাননা স্মারক দেখাচ্ছেন আকরামুজ্জামান

ফুকরা ইউনিয়নের ২নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা আকরামুজ্জামানের ছেলে মো.মনিরুজ্জামান বলেন, আমার বাবা প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে পাক বাহিনীর সঙ্গে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দীর্ঘ ৪৯ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা সনদ পাননি। একজন মুক্তিযোদ্ধার গর্বিত সন্তান হিসেবে আমার বাবার মুক্তিযোদ্ধা সনদ দাবি করছি।

মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, ‘আগামীকাল ওই ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে আকরামুজ্জামানের বিষয়টি দেখা হবে।’

লিয়াকত হোসেন লিংকন/ এমআইএইচ