রংপুর সিটি কর্পোরেশনের (রসিক) ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও তাজহাট থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া আলম শিপলুকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় নগরীর বিনোদপুর রেলক্রসিং এলাকার বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলু সড়ক ও জনপথ বিভাগের জমি জালিয়াতি করে রেজিস্ট্রি বায়না দলিল করা সংক্রান্ত মামলায় এক বছর দণ্ডপ্রাপ্ত ও একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি।

গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলুকে মামলার ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, বাড়ি নির্মাণে বাধা দেওয়া, ভাঙচুর, মারপিট, চাঁদাবাজির অভিযোগে ২৪৪/২২ এবং এবং ১৮১/২২ নম্বর মামলা এবং বিদ্যুৎ কোর্টে বিল বকেয়া রাখার কারণে ৪০৫৪/২১ নম্বর মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল। সে কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে আরও একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও তিনি একটি মামলার এক বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ওয়ারেন্টগুলো আগেই আদালত জারি করলেও প্রক্রিয়াগতভাবে ওয়ারেন্টগুলো আমাদের কাছে না থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে আদালত থেকে ওয়ারেন্টপ্রাপ্ত হওয়ার পর পরই তাকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

এর আগে শুক্রবার বিকেলে দর্শনা মোড় রেলগেট বিনোদপুর এলাকার ভগ্নিপতির বাড়িতে অবস্থান করা জাকারিয়া আলম শিপলুকে আটক করতে যায় পুলিশ। আটক করতে যাওয়ার বিষয়টি মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়লে এলাকার শত শত নারী-পুরুষ পুরো বাড়ি ঘিরে ফেলে। তারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশে পুলিশকে বাধা দেয় এবং গ্রেপ্তার চেষ্টার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক হতে থাকলে কোতয়ালী থানা থেকে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স ও জলকামান পাঠানো হয়।

এদিকে, সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে, সেই সঙ্গে পুলিশের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। এসময় তুমুল উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েক দফায় শিপলুর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু এলাকাবাসীর তোপের মুখে তারা ব্যর্থ হন। পরে সাড়ে রাত ৯টার দিকে জাকারিয়া আলম শিপলুকে তার ব্যক্তিগত একটি গাড়িতে করে কোতোয়ালি থানায় নেওয়া হয়।

অভিযানে বাধা দেওয়া প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তা আবু মারুফ হোসেন জানান, অনেকেরই অনেক ফ্যান-ফলোয়ার থাকে। কাউন্সিলর শিপলু সাহেবের লোকজন সেখানে জড়ো হয়েছিল। তবে তারা কোনো ফোর্স করেনি।

অন্যদিকে, কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলুকে আটক ও হয়রানি করা হলে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছে এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, রংপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে পরাজিত কাউন্সিলর প্রার্থী শাফিউল ইসলাম শাফি পুলিশ দিয়ে জাকারিয়া আলম শিপলুকে হয়রানি করছেন, যা অন্যায় এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

রসিক কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলুর আইনজীবী মাহামুদুল হক সেলিম সাংবাদিকদের জানান, কাউন্সিলর শিপলুকে যে মামলায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে এসেছে সে মামলা সম্পর্কে তিনি জানতেন না। এ মামলার চার্জশিটে কাউন্সিলরকে অভিযুক্ত করেছে পুলিশ। শনিবার আদালতে কাউন্সিলরের  জামিন আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি।

উল্লেখ্য, গত ১ এপ্রিল যমুনা টেলিভিশনের অপরাধ অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠান ক্রাইম সিনে সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি জালিয়াতি করে রেজিস্ট্রি বায়না দলিল করা সংক্রান্ত মামলায় এক বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ও একাধিক মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি কাউন্সিলর জাকারিয়া ইসলাম শিপলুর বিরুদ্ধে জমি দখল, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপকর্ম প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়। এ ঘটনায় সংক্ষুব্ধ হয়ে কাউন্সিলর শিপলু গত বুধবার (৫ এপ্রিল) সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার মাজহারুল মান্নানসহ তিন জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন দাখিল করেন। এরপর দিন রংপুরের সাংবাদিক সমাজ মানববন্ধন সমাবেশ করে মামলার আবেদন প্রত্যাহার এবং কাউন্সিলর শিপলুর গ্রেপ্তার দাবি করেন।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এসএসএইচ/