ট্রেনে পদ্মা পাড়ি দিয়ে উচ্ছ্বসিত চালক-যাত্রীরা
ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালিয়ে ইতিহাসে নাম লেখালেন রবিউল আলম। ভাঙ্গা স্টেশন থেকে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১টা ১৫ মিনিটে পরীক্ষামূলক বিশেষ ট্রেনটি চালিয়ে তিনি পদ্মা সেতু অতিক্রম করে ৩টা ১৫ মিনিটে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া স্টেশনে পৌঁছান প্রথম চালক হিসেবে।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাসিন্দা রবিউল আলম ১৯ বছর আগে ট্রেনের সহকারী চালক হিসেবে পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে স্টেশনে কর্মজীবন শুরু করেন।
বিজ্ঞাপন
রবিউল আলম বলেন, কর্মজীবন শুরু করার পর দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রেন চালিয়েছি। তবে আমার জীবনের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম অধ্যায় হলো আজকে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চালানো। ঈশ্বরদীতে আমার মতো অনেক ট্রেনচালক রয়েছেন। সাত দিন আগে আমি যখন জানতে পারি পদ্মা সেতু দিয়ে প্রথমবারের মতো ট্রেন চালাবো আমি তখন উত্তেজিত হয়ে পড়ি। পদ্মা সেতুর ইতিহাসে প্রথম ট্রেনচালক আমি। বিষয়টি নিয়ে আমার পরবর্তী প্রজন্ম গর্ব করবে। ভাষায় প্রকাশ না করার মতো অনুভূতি সৃষ্টি হয় আমার মধ্যে। প্রথমে ভেবেছিলাম আমি পারব কি না! কিন্তু আমি পেরেছি। যারা আমাকে প্রথম চালক হিসেবে ট্রেন চালাতে সহযোগিতা করেছে তাদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি।
রবিউল আলম পরীক্ষামূলক ট্রেনটি পদ্মা সেতুর দুই পাড়ের রেলপথ দিয়ে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার ও পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার বেগে চালিয়েছেন।
রবিউল আলমের সহকারী লোকো মাস্টার হিসেবে ছিলেন আরিফ হোসেন। আরিফ হোসেন তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, আমি ইতিহাসের অংশ হয়ে গেলাম। আমার জীবন ধন্য। আমি পদ্মা সেতু দিয়ে প্রথম ট্রেন চালকের সহকারী লোকো মাস্টার হিসেবে ছিলাম।
পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলবে বিষয়টি জানতে পেরে উচ্ছ্বসিত হয়ে এক প্রকার জোড় করে রেললাইন কর্তৃপক্ষকে অনুনয়-বিনয় করে ট্রেনে উঠেছেন ফরিদপুরের মাকসুদ আহমেদ গোলাম মাওলা নামে এক ব্যক্তি। তিনি ট্রেনের প্রথম সাধারণ যাত্রী হওয়ার আগ্রহ থেকেই ট্রেনে উঠেছেন।
তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক ট্রেনটিতে মন্ত্রী, কর্মকর্তাসহ সাংবাদিকরা উঠেছেন। কিন্তু আমি প্রথম সাধারণ মানুষ হিসেবে ট্রেনের যাত্রী হয়েছি। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে আমি ট্রেনে চড়ে মাওয়া আসছি। এখান থেকে ঢাকা যাব। ট্রেনে চড়ে আমি আনন্দে আত্মহারা। পদ্মা সেতু দিয়ে রেলপথে ট্রেন চলাচল দেশের ইতিহাসে মাইলফলক। আমি এ মাইলফলকের প্রথম যাত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিচ্ছি। কেননা এ সমস্ত কিছুই তার অবদান।
রমজান শিকদার নামে এক গণমাধ্যম কর্মী বলেন, আমি খুব আনন্দিত এবং উচ্ছ্বসিত। কারণ পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে প্রথমবারের মতো সত্যি সত্যি পদ্মা নদী পাড় হয়েছি। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।
শাহীন আলম নামে শরীয়তপুরের এক যাত্রী বলেন, পদ্মা নদী যখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাড় হতাম তখন কল্পনাও করতে পারতাম না যে এখানে সেতু হবে। ঝুঁকিই জীবনের নিয়তি ধরে নিয়ে যুগের পর যুগ পাড় করেছি। গত বছর থেকে বাসে, গাড়িতে পদ্মা পাড়ি দিয়েছি। আজ ট্রেনে চড়ে পদ্মা পাড়ি দিয়েছি। অনুভূতি বলতে একটা শব্দই ব্যবহার করব তা হলো কৃতজ্ঞতা।
ভাঙা-মাওয়া রেল লিংক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সাইদ আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, যেদিন আমি প্রথম এই প্রকল্পে যোগ দিয়েছি। সেদিনই সাধারণ মানুষের মতো স্বপ্ন দেখেছি একদিন পদ্মা নদী ট্রেন দিয়ে পাড়ি দেব আমি। সাধারণ মানুষের মতোই আমিও উচ্ছ্বসিত ছিলাম এই দিনটির জন্য। ট্রেনে চড়েছি। আমার অনভূতি আমি আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত।
এদিকে পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল শেষ হওয়ার পর মাওয়া স্টেশনে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।
তিনি বলেন, আজ পদ্মা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরের যেকোনো সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুতে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন। এরপরই ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে।
এর আগে বেলা ১টা ১৮ মিনিটে ফরিদপুরের ভাঙ্গা স্টেশন থেকে ৭টি বগির একটি বিশেষ ট্রেন মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও সাধারণ মানুষ নিয়ে পদ্মা সেতুর দিকে রওনা হয়। সেতু পাড়ি দিয়ে বেলা সোয়া ৩টার দিকে ওই ট্রেন মাওয়া স্টেশনে পৌঁছায়। এ সময় সেতুর জাজিরা প্রান্তের ৪২ নম্বর পিলারের কাছে ও মাওয়া প্রান্তের ১ নম্বর পিয়ারের কাছে প্রকল্পের কর্মকর্তা ও শ্রমিকেরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে আতশবাজি ফোটান।
এরপর মাওয়া স্টেশনে প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে ব্রিফ করেন রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এ সময় চিফ হুইপ নুর-ই-আলম চৌধুরী, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান, ইকবাল হোসেন, নাহিম রাজ্জাক ও সাগুপ্তা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।
আরএআর