উপ-কর কমিশনারের ড্রয়ারে মিলল ঘুষের ১০ লাখ টাকা
রাজশাহীতে কর কমিশনারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে ঘুষের ১০ লাখ টাকাসহ উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে আটক করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় কর অফিসের লোকজনের সঙ্গে দুদকের কর্মীদের ধস্তাধস্তিতে চারজন আহত হয়েছেন। অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন দুদকের বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক আমিনুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে এ অভিযান চালানো হয়। পরে বিকেল ৩টার দিকে তাকে রাজশাহী দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে মামলা হবে। মামলা হলে তাকে এই অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
বিজ্ঞাপন
দুদক সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকা (গাইনি বিশেষজ্ঞ) রাজশাহী কর অঞ্চলের সার্কেল-১৩ এর করদাতা। করের বিষয়ে তাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছিল। তার পাঁচ বছরের ফাইল রিঅপেন করে উচ্চহারে কর নির্ধারণের হুমকি দেন উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়া। একপর্যায়ে কর কমিশনার তাকে (ফাতেমা) বলেন ৬০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে তার খুব কম কর নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। পরে বিষয়টি ৫০ লাখ টাকায় বোঝাপড়া হয়। সেই হিসেবে আজ সকালে প্রথম কিস্তির ১০ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য রাজশাহী কর কার্যালয়ে আসেন ফাতেমা সিদ্দিকা। এ সময় ১০ লাখ টাকাসহ মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে হাতেনাতে আটক করেন দুদকের কর্মকর্তারা।
এর আগে দুদকের কর্মীরা উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়ার কক্ষে উপস্থিত হয়ে তাকে ঘিরে ধরেন। এ সময় তিনি রুম থেকে বের হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। দুদকের কর্মীদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় অফিসের কর্মীদের। দুই পক্ষ বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে কর অফিসের কর্মীরা দুদকের লোকজনের দিকে তেরে আসলে তারা দরজা বন্ধ করে দেন। কর অফিসের লোকজন এসে উপ-কর কমিশনারের রুমের দরজা ভাঙচুর করে ভেতরে প্রবশে করেন। এ সময় তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে দুদকের উপ-পারিচালক আমিনুল ইসলাম, ডিএডি বরহান উদ্দিন, মাহাবুর রহমান ও মজিদুল হক আহত হন।
কর অঞ্চল রাজশাহীর কর কমিশনার শাহ আলী বলেন, রাজশাহী দুদকের পক্ষ থেকে আমাকে জানানো হয় আমার অফিসে অভিযোগের বিষয়ে কাজ করবে তারা। আমি বললাম ঠিক আছে আপনারা আপনাদের কাজ করেন। আমাদের অফিস তাদের সহযোগিতা করেছে। কর্মকর্তা বা ফাতেমার বিষয়ে অফিশিয়ালি অভিযোগের বিষয়ে আমাকে কিছু জানানো হয়নি। তবে আটক করে নিয়ে গেছে আমাদের উপ-কর কমিশনার মহিবুল ইসলাম ভূঁইয়াকে।
চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকার কর ফাঁকি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় রাজশাহীর উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, ঘুষের প্রথম কিস্তির ১০ লাখ টাকাসহ উপ-কর কমিশনারকে হাতেনাতে আটক করেছি। তার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আমাদের কাছে আগে থেকে অভিযোগ ছিল। আমরা তাকে নজরদারিতে রেখেছিলাম। আমাদের কাছে কর কর্মকর্তার টাকা নেওয়ার সব ধরনের ডকুমেন্ট আছে।
উপ-কর কমিশনারকে মারধরের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু পুলিশ নিয়ে যাইনি। উপ-কর কমিশনার রুম থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে ধস্তাধস্তি হয়। এ সময় কর অফিসের লোকজন দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করেন। অবস্থা বেগতিক দেখে আমরা পুলিশ ডাকি। উনারা (কর অফিসের লোকজন) আমাদের ওপরে হামলা করেছেন। কিন্তু আমরা কাউকে আঘাত করিনি। আঘাতের যে চিহ্ন সেটি ধস্তাধস্তির কারণে হয়েছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে মনিরুজ্জামান বলেন বলেন, উপ-কর কমিশনারের রুমে যাওয়ার পরে টাকা আমরা তার ড্রয়ারে পাই। এ ঘটনায় ঘুষ গ্রহণের মামলা হবে।
তিনি বলেন, চিকিৎসক ফাতেমার পাঁচ থেকে ছয় বছরের ব্যাংকের লেনদেন ছিল ২৬ কোটি টাকার। গত ২৯ মার্চ আমাদের হেড অফিসে তিনি অভিযোগ করেছিলেন। সেখান থেকে নির্দেশনা পেয়ে আমরা কর অফিস নজরদারিতে রেখেছিলাম। এই অভিযান জেলা ও বিভাগীয় কর্যালয় পরিচালনা করে। অভিযানে আমাদের টিমে ছিলেন ৯ জন। চারজন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন উপ-পারিচালক আমিনুল ইসলাম, ডিএডি বোরহান উদ্দিন, মাহাবুর রহমান ও মজিদুল হক।
এ বিষয়ে জানতে চিকিৎসক ফাতেমা সিদ্দিকার মুঠোফোনে কল করা হলে সাদেকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি বলেন, ইমারজেন্সিতে আছি। পরে কথা বলছি।
শাহিনুল আশিক/আরএআর