স্বাধীনতা দিবসে ফুল দেওয়া নিয়ে পুলিশ-বিএনপির সংঘর্ষ, আটক ৭
নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলায় স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ফুলের তোড়া দেওয়া নিয়ে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২৬ মার্চ) সকালে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের বরাতে জানা গেছে, স্বাধীনতা দিবসে বিএনপি নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিতে গেলে পুলিশের বাধায় তা পণ্ড হয়। পরে দলীয় কার্যালয়ে ফেরার পথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে এবং পুলিশ রাবার বুলেট ছুঁড়ে।
বিজ্ঞাপন
পুলিশ জানায়, সংঘর্ষে ৪ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়াসহ ৪ জনকে আটক করেছে। তবে বিএনপি বলছে, ১৫-২০টি রাবার বুলেটসহ তাদের ৭ নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ।
এ নিয়ে দুর্গাপুর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সম্রাট গণি জানান, দুর্গাপুরে গত ১৫-২০ বছর ধরে শহীদ মিনারে ফুলের তোড়া অর্পণের মাধ্যমে আমরা স্বাধীনতা দিবস পালন করে আসছি। এর অংশ হিসেবে রোববার সকালে কাচারি মোড় এলাকায় দলীয় কার্যালয়ে সামনে আমাদের কয়েকশ নেতাকর্মী অবস্থান করেন। তখন কোনো সমস্যা হয় নাই। পুলিশ আসা-যাওয়া করেছে। ডিএসবি ও পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা কয়টায় অনুষ্ঠান জানতে চাইলে আমরা বলি সকাল ১০টায়। আমরা নির্দিষ্ট সময়ে বের হলে রাস্তায় পুলিশ কর্মকর্তা সুভাশীষ এসে ব্যানার ও ফুলের তোড়া নিয়ে তিনি শহীদ মিনারে যেতে বাধা দেন।
তিনি বলেন, কোনো স্লোগান দেওয়া যাবে না। তখন আমরা ফিরে আসছিলাম। থানার সামনের রাস্তা দিয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার পথে পেছন দিক থেকে যুবদলের আহ্বায়ক আবু সিদ্দিক রুক্কুকে লাঠি দিয়ে বাড়ি দেয় পুলিশ। তাকেসহ বিএনপি নেতা ঈমাম হাসান আবুচান, আতাউর রহমান ফরিদ ও শাহ আলম শ্যামলকে ধরে নিয়ে যায়।
পরে এ নিয়ে পুলিশের সঙ্গে প্রথমে আমাদের ব্যানার নিয়ে টানাটানি ও কাগজ ছোড়াছুড়ি হয়। একপর্যায়ে যুবদলের পক্ষ থেকে স্লোগান দিতে থাকি। একপর্যায়ে পুলিশ কমপক্ষে ১৫-২০টা রাবার বুলেট ছুড়ে। তখন আমরাও ঢিল দিই। মোবাইলে ভিডিও করার সময় আমাদের ৭-৮টি মোবাইল ছিনিয়ে নেয় পুলিশ। এছাড়া মসজিদের ভেতরে নেতাকর্মীদের রাখা প্রায় ৩০০ মোটরসাইকেল নিখোঁজ। কিন্তু পুলিশ বলছে তারা ৩০-৪০টার মতো মোটরসাইকেল নিয়েছে। আমার ডান হাঁটুতে বুলেট লেগেছে। ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক শিশিরের মাথায় গুলি লাগাসহ প্রায় ৫০-৬০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। পরে আবু চান চেয়ারম্যানের বাড়ি এসে দলীয় লোকজনদের খুঁজতে থাকে পুলিশ। বাড়িতে কাউকে না পেয়ে পুরো বাড়ি তছনছ করে। পুলিশ বাড়ির বাথরুমের কমোডও ভেঙেছে। সেখান থেকে ড্রাইভার আরিফ এবং স্মরণীকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র মইনুল ইসলাম মাহি ও আরমানকে তুলে নিয়ে যায়।
দুর্গাপুর থানা পুলেশের ওসি মো. শিবিরুল ইসলাম জানান, বিএনপির লোকজন রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে। তারা ইট-পাটকেল মারাসহ ককটেল ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়।
তবে বিএনপির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, যেটা বাস্তবতা সেটা বলেছি। ৪ রাউন্ড গুলি ছোড়ার কথা জানান তিনি।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জহিরুল আলম ভুইয়া স্থানীয় সাংবাদিকদের জানান, পৌর শহরের কাচারী মোড় এলাকা থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য শত শত নেতাকর্মী নিয়ে শহীদ মিনারে যাওয়ার প্রাক্কালে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় অন্যান্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ তর্কবিতর্কে জড়িয়ে গিয়ে আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে, আমাদের ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। পরে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিপেটা শুরু করে পুলিশ।
নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি ও মিডিয়া) মো. লুৎফর রহমান বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিএনপির লোকজন শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসার সময় দুর্গাপুর পৌরসভার কাচারি মোড় এলাকায় পৌঁছার পরে পুলিশকে দেখে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। পুলিশ গালিগালাজের কারণ জিজ্ঞেস করলে তখন বিএনপি নেতাকর্মীরা ঠেলা-ধাক্কা দেওয়া শুরু করে ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের সতর্ক করে লাঠিপেটা ও ৪ রাউন্ড ফায়ার করে ও চারজনকে আটক করে।
বিএনপির পক্ষ থেকে নবম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থীসহ ৭ জন আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, ৭ জন আটকের বিষয়টি জানা নাই। তবে পুলিশের অভিযান চলছে। অনেকে অনেকভাবে কথা বলে থাকে।
মো. জিয়াউর রহমান/এমএএস