ওসির বিরুদ্ধে নারী উদ্যোক্তাকে ধর্ষণ-নির্যাতনের অভিযোগ
সদ্য সাময়িক বরখাস্ত হওয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজার বিরুদ্ধে এক নারী উদ্যোক্তাকে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) দুপুরে জেলা শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী এসব অভিযোগ করেন।
এর আগে গত ২২ ফেব্রুয়ারি ওই নারীকে নিয়ে থানায় হট্টগোল ও অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওসি সেলিম রেজাকে ১৭ মার্চ সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
বিজ্ঞাপন
সংবাদ সম্মেলনে ওই নারী অভিযোগ করে বলেন, ২০২০ সালের শেষ দিকে ওসি মো. সেলিম রেজা নাচোল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা থাকাকালে তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরে মামলা সংক্রান্ত কাজে যাওয়া-আসা সূত্রে আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যা পরে প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। পরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জেলা শহরের নাখেরাজপাড়ায় ওসি সেলিম রেজার ভাড়া করা বাসায় আমরা একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে আমাকে নিয়ে হোটেলে অন্তরঙ্গ মুহূর্ত পার করেছেন ওসি সেলিম রেজা। নাচোল থানার পর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বিশেষ শাখায় ও ভোলাহাট থানায় কর্মরত থাকাকালেও আমাদের সম্পর্ক অটুট থাকে এবং বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গিয়ে আমরা রাত্রিযাপন করি। একপর্যায়ে ওসির স্ত্রী আমাদের সম্পর্কের কথা জেনে ফেললে ওসি সেলিম রেজা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
এক সন্তানের জননী ডিভোর্সি ওই নারী বলেন, প্রথম দিকে ওসির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের সময় তিনি জানান, তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়েছেন এবং আমাকে বিয়ে করতে চান। যার কারণে আমি তার প্রতি সরল বিশ্বাস রেখে এতদূর পর্যন্ত সম্পর্ক নিয়ে যাই। পরে জানতে পারি তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দেননি। তিনি যোগাযোগ বন্ধ করতে চাইলেও আমি তাকে পেতে যোগাযোগের চেষ্টা অব্যাহত রাখি। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের গত ৬ ফেব্রুয়ারি তাকে বিয়ের দাবিতে ভোলাহাট থানায় যাই। এ সময় আমাকে বেধড়ক মারধর করে ও পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন।
বিয়ের দাবিতে থানায় একাধিকবার অনশন করার কথা জানিয়ে ওই নারী বলেন, গত ২২ ফেব্রুয়ারি ভোলাহাট থানায় গেলে ওসি নিজে এবং থানার কনস্টেবল ও ড্রাইভার দিয়ে আমাকে বেধড়ক মারধর করেন। আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন তারা। বিয়ের দাবিতে অনশন করলে ৫৪ ধারায় পুলিশের কাজে বাধাদানের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করে। পরে ৭ দিন কারাগারে থাকার পর ফিরে এসে জব্দ হওয়া মোবাইল থানা থেকে ফেরত নিয়ে আসি।
তিনি বলেন, থানা থেকে মোবাইল এনে দেখি ওসি সেলিম রেজা আমাদের কথোপকথনের অডিও ও ভিডিও সব কিছু মুছে দিয়েছেন এবং আমাদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়েই গত বুধবার (২২ মার্চ) পুলিশের রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ দিয়েছি। আমি তাকে বিয়ে করতে চাই। বিয়ে না করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
এ বিষয়ে কথা বলতে ওসি সেলিম রেজার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে ওই নারী আমাদের কাছে এমন কোনো লিখিত অভিযোগ দেননি। তবে থানায় বিশৃঙ্খলা হওয়ার একটি ভিডিও ক্লিপ পেয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে ওসি সেলিম রেজাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। কিন্তু ওই নারীর সঙ্গে পরকীয়ার সম্পর্কের বিষয়ে তদন্তের আগে নিশ্চিত করে বলা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর তদন্ত করবে। তদন্ত সাপেক্ষে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। থানায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য প্রাথমিকভাবে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম/আরএআর