বাগেরহাটের রামপালে ২৭ বছর ধরে চলছে খান জাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ। এ দীর্ঘ সময়ে জমি অধিগ্রহণ, মাটি ভরাট আর চারপাশের প্রাচীরেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এর কাজ। ফলে স্থানীয়দের মধ্যে বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ শেষ হওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।

সরেজমিনে বিমানবন্দর এলাকায় ঢুকতে প্রথমেই চোখে পড়ে নামফলক। বড় গেটটি অতিক্রম করে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় বিস্তীর্ণ মরু অঞ্চল। এক পাশে ধীরগতিতে চলছে বালু ভরাটের কাজ। অপর পাশে গরু-ছাগল চরাচ্ছেন স্থানীয়রা। আরেকটু ভেতরে গেলে দেখা যায় কিছু ইট, ইটের খোয়া ও বালুর স্তূপ। বড় আকৃতির ঢালাই দেওয়া রিং-ও পড়ে আছে এক পাশে।

বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য ১৯৬১ সালে খুলনার মূল শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তরে বর্তমান ফুলতলার মশিয়ালী গ্রামে স্থান নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ১৯৬৮ সালে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতী এলাকায় স্থান নির্ধারণ করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরে তা বাতিল করে আশির দশকে বাগেরহাটের ফকিরহাট ও রামপাল উপজেলায় স্থান নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে বর্তমান জায়গায় ৯৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে প্রাথমিকভাবে স্টলপোর্ট (সংক্ষিপ্ত উড্ডয়ন ও অবতরণ করা যায় এমন বিমানবন্দর) নির্মাণ করা হয়। পরে আরও ৫৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এ সময় প্রকল্পের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৯০ কোটি টাকা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করবে বলে জানায়

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য ১৯৬১ সালে খুলনার মূল শহর থেকে ১৭ কিলোমিটার উত্তরে বর্তমান ফুলতলার মশিয়ালী গ্রামে স্থান নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ১৯৬৮ সালে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে শহর থেকে ১৩ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বিল ডাকাতিয়ার তেলিগাতী এলাকায় স্থান নির্ধারণ করে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরে তা বাতিল করে আশির দশকে বাগেরহাটের ফকিরহাট ও রামপাল উপজেলায় স্থান নির্ধারণ করা হয়। সর্বশেষ ১৯৯৬ সালে বর্তমান জায়গায় ৯৫ একর জমি অধিগ্রহণ করে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে প্রাথমিকভাবে স্টলপোর্ট (সংক্ষিপ্ত উড্ডয়ন ও অবতরণ করা যায় এমন বিমানবন্দর) নির্মাণ করা হয়। পরে আরও ৫৩৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এ সময় প্রকল্পের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ৫৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৯০ কোটি টাকা এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ ৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করবে বলে জানায়।

নির্মাণাধীন খান জাহান আলী বিমানবন্দরের এক পাশে ধীরগতিতে চলছে বালু ভরাটের কাজ। অপর পাশে গরু-ছাগল চরাচ্ছেন স্থানীয়রা / ঢাকা পোস্ট

নির্মাণাধীন বিমানবন্দরের মধ্যে গরু চরাচ্ছিলেন স্থানীয় আবুল শেখ। গরু চরানোর কারণ জিজ্ঞেস করতেই তিনি হেসে ফেলেন। আবুল শেখ বলেন, ‘আগে তো বিমান আসুক তারপরে গরু চরানো বন্ধ দিবানি। এত বড় জায়গা, ফাঁকা পড়ে রইছে। সেজন্যই তো আমরা এখানে আসি।’

আব্দুল জাফর নামের আরেক ব্যক্তি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমানবন্দরের কাজ শুরু হলে ঘর-দরজা সব ভেঙে নিয়ে চলে যাই। ভেবেছিলাম, বিমানবন্দরের কাজ শেষ হলে আমাদের কপাল খুলবে। কিন্তু হয়েছে ঠিক উলটো। এখন আমরা খুবই নিরুপায়।

নির্মাণাধীন বিমানবন্দর এলাকার নিকটবর্তী খানপুর এলাকার স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী স্নিগ্ধা ফাতেমা বলেন, ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি খানজাহান আলী বিমানবন্দরের কাজ চলছে। কিন্তু এখনও শেষ হওয়ার লক্ষণ দেখছি না। আদৌও কাজ শেষ হবে কি না— তা নিয়ে সন্দেহ আছে।

হোগলডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মারিয়া বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, অধিগ্রহণের সময় বসতবাড়ির জমিটুকু বিমানবন্দরের জন্য সরকার নিয়ে নেয়। টাকা যা পেয়েছি তা দিয়ে নতুন করে জমি কিনতে পারিনি। এখন মানুষের জায়গায় কোনোরকম ঘর তুলে থাকি।

খান জাহান আলী বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ এখনও শেষ না হওয়ায় তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়রা / ঢাকা পোস্ট

একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী সানি জোবায়ের বলেন, ‘এখানে বিমানবন্দর হলে আমাদের পর্যটন শিল্পের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। ষাটগম্বুজ মসজিদ, সুন্দরবন থেকে শুরু করে অন্যান্য প্রাচীন নিদর্শন দেখতে আরও বেশি দর্শনার্থী আসবেন। কিন্তু বিমানবন্দরের নির্মাণকাজই শেষ হচ্ছে না, মানুষ আসবে কীভাবে?’

স্থানীয় বাইনতলা ইউনিয়নের আদর্শ সমাজকল্যাণ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আলমগীর হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমানবন্দরটি নির্মাণ হলে স্থানীয় পর্যায়ে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। ফলে এ অঞ্চলের বেকারত্ব কিছুটা হলেও দূর হবে।

রামপাল উপজেলার বাইনতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফকির আব্দুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিমানবন্দরটি চালু হলে এ অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটবে। বেকার সমস্যা দূর হবে। মোংলা বন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার সঙ্গে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের যোগাযোগ বাড়বে।

নিয়মিত বিমানে যাতায়াতকারী সোহাগ হাওলাদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, বাগেরহাট থেকে কেউ যদি বিমানে করে গন্তব্যে যেতে চান তাহলে আগে শত কিলোমিটার দূরের যশোরে যেতে হয়। এতে একদিকে সময় অপরদিকে অর্থও নষ্ট হয়।

নির্মাণকাজের ধীরগতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি— বলেন জেলা প্রশাসক / ঢাকা পোস্ট

ষাটগম্বুজ-সুন্দরবন ট্যুরিজম অপারেটরের পরিচালক মীর ফজলে সাঈদ ডাবলু জানান, বাগেরহাটে অনেক পর্যটন স্পট থাকলেও সুযোগ-সুবিধা খুবই কম। পদ্মা সেতু হওয়ায় দেশীয় পর্যটক কিছুটা বাড়লেও বিমানবন্দর না থাকায় বিদেশি দর্শনার্থীরা এখানে আসতে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

বাগেরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি লিয়াকত হোসেন লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, কোনো অঞ্চলের উন্নয়নের প্রথম ধাপ হচ্ছে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা। বাগেরহাট অর্থনৈতিকভাবে দিনদিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। আরও উন্নয়নের জন্য এখানে বিমানবন্দর খুবই প্রয়োজন। কেননা বাইরের ব্যবসায়ীরা বিমান ছাড়া আসতে চান না। ফলে বিনিয়োগও খুব বেশি বাড়ছে না। এসব কারণে দ্রুত বিমানবন্দরের নির্মাণকাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণকাজ বাস্তবেই ধীরগতিতে চলছে। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। যেহেতু বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা চলছে তাই কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে বাগেরহাটের পর্যটন, বন্দর, শিল্প-কারখানাসহ সার্বিক বিষয় আরও এগিয়ে নিতে সরকার সচেষ্ট।

এমজেইউ