চাঁদপুরের অর্ধ শতাধিক গ্রামে রোজা শুরু
সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরের প্রায় অর্ধ শতাধিক গ্রামে বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) থেকে রোজা পালন শুরু হয়েছে। গতকাল রাতে এসব গ্রামের মানুষ তারাবির নামাজ আদায় করেন।
প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ১৯২৮ সালে আগাম রোজা রাখাসহ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালনের নিয়ম চালু করেন সাদ্রা দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইসহাক (রা:)। তার অনুসারীরা প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন করে থাকেন। সেই থেকে বেশ কয়েকটি গ্রাম আরব দেশসমূহের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখা ও ঈদ উদযাপন করে থাকে।
বিজ্ঞাপন
স্থানীয়রা জানান, চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা, সমেশপুর, অলীপুর, ভোলাচোঁ, ঝাকনি, সোনাচোঁ, প্রতাপপুর, ও সুরঙ্গচাইল গ্রাম। ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুরঙ্গচাউল, কাইতাড়া, উভারামপুর, টোরামুন্সিরহাট, সাচনমেঘ, মাছিমপুর, বাসারা, উটতলী, শাচনমেঘ, খিলা, উভারামপুর, পাইকপাড়া, বিঘা, উটতলী, বালিথুবা, শোল্লা, রূপসা দক্ষিণের একাংশ, গোয়ালভাওর এবং মতলব উত্তর উপজেলার পাঁচানী, বাহেরচর পাঁচানী, আইটাদি পাঁচানী, দেওয়ানকান্দি, লতুর্দী, সাতানী ও দক্ষিণ মাথাভাঙ্গার আংশিক, আমিয়াপুর গ্রামের একাংশ, মধ্য ইসলামবাদ গ্রামের একাংশ, গাজীপুর গ্রামের একাংশ, মধ্য এখলাছপুর (বড়ইকান্দি) গ্রামের একাংশ, ফরাজীকান্দি, রামদাশপুর, চরমাছুয়া, হাজিপুর, দক্ষিণ রামপুর, সরকারপাড়া ও ঠাকুরপাড়ায় এবারও সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা রাখছেন গ্রামবাসীরা।
মতলব উত্তরের দেওয়ানকান্দি গ্রামের বোরহান উদ্দিন ডালিম বলেন, আমরা চট্টগ্রামের মির্জাখিল দরবার শরিফের অনুসারী। প্রতি বছর আমরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোজা ও ঈদ উদযাপন করে আসছি। এবারও এভাবে রোজা রাখছি।
রোজা পালনের বিষয়ে মির্জাখিল দরবার শরিফের মোহাম্মদ মছউদুর রহমান বলেন, আমরা হানাফি মাজহাবের অনুসারী হিসেবে সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনা শরিফে তথা আরব বিশ্বে চাঁদ দেখার খবর পাওয়ায় বৃহস্পতিবার আমাদের প্রথম রোজা শুরু।
হাজীগঞ্জের সাদ্রা গ্রামে অহিদুল ইসলাম ছেলে আব্দুর রহমান শুক্কুর বলেন, সাদ্রা দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা পীর মাওলানা ইসহাক (রা:) ১৯২৮ সাল থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশে সর্ব প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো পালন করেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রতি বছর ঈদ ও রোজা পালন করে আসছি। এছাড়াও শবে বরাত, শবে কদর এবং শবে মেরাজসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান এভাবেই পালন করি। ইমান আবু হানিফা (রা:)-এর মতে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে চাঁদ ওঠার ভিন্নতার কারণ গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে চাঁদ দেখা গেলে আরবি তারিখ শুরু হয়ে যায়। তার মানে সময়ের পার্থক্যের কারণে ঈদ, রোজা যেই সময়ে বাংলাদেশে করে থাকে সেই হিসেবে ঈদ ও রোজা কাজা হয়ে যায়। এজন্য সারা বিশ্বে একই সময়ে ঈদ, রোজা পালন করা উচিত। কারণ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানে ঈদের দিন রোজা হয়। তবে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে প্রথম চাঁদ দেখা গেলেই একযোগে রোজা শুরু হয়।
নাসির উদ্দিন নামে স্থানীয় আরেক জন বলেন, আমার বুঝতে শেখার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রথম চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে রোজ রাখি। আমরা বিশ্বের যেকোনো জায়গা চাঁদ দেখার ভিত্তিতে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করি।
হাজীগঞ্জের সাদ্রা দরবার শরিফের পীর জাকারিয়া চৌধুরী আল মাদানি জানান, আমরা কোরআন সুন্নাহের আলোকে সাদ্রা দরবার শরিফের প্রতিষ্ঠাতা পীর মাওলানা ইসহাক (রা:)-এর নিয়ম অনুযায়ী প্রথম চাঁদ দেখার ভিত্তিতে রোজা ও ঈদ পালন করে আসছি। এই ধারাবিহকতায় আমরা রোজা রাখছি। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ঠিক একই সঙ্গে রোজা পালন হচ্ছে।
পীর শাইখ মো. আরিফ চৌধুরী জানান, এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা পীর মাওলানা ইসহাক প্রথম চন্দ্র দর্শনের ভিত্তিতে ধর্মীয় উৎসব পালনের রেওয়াজ চালু করেন। চাঁদ দেখার ভিত্তিতে মুসলিম বিশ্ব সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা তার ভিত্তিতে রোজা রাখি। মুসলিম বিশ্বের প্রথম চাঁদ দেখা গেলে রোজা ও ঈদ পালন করতে হবে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্র হতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের মাত্র ৩ থেকে ৪ দেশ এই নিয়ম অনুসরণ করে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ওআইসি’র তালিকাভূক্ত একটি দেশ। ওআইসি’র সিদ্ধান্ত হচ্ছে বিশ্বের প্রতিটি দেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করবে। আমি আশা করি আমাদের দেশ ওআইসি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একই দিনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করবে।
আনোয়ারুল হক/আরকে