চোখের সমস্যার কারণে আর এক পারা কোরআন মুখস্ত করতে পারছে না কিশোর মো. আবু হুরায়রা (১৪)। ইতোমধ্যে ২৯ পারা কোরআন মুখস্ত করেছে সে। দীর্ঘদিন যাবৎ চোখের কর্নিয়া জনিত সমস্যায় ভোগার কারণে আর পড়তে পারছে না সে। বর্তমানে চিকিৎসার অভাবে দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছে আবু হুরায়রা। 

সে সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা সদরের সিদ্দিকীয়া মাদরাসার হাফেজী বিভাগের ছাত্র ও পাটকেলঘাটার কুমিরা ইউনিয়নের অভয়তলা গ্রামের মো. মাসুদুর রহমানের ছেলে। দুই ভাই বোনের মধ্যে আবু হুরায়রা বড়। 

আবু হুরায়রা ইতোমধ্যে ঢাকা আই ভিশন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। সেখানকার চিকিৎসকদের ভাষ্যমতে দ্রুত চোখের অপারেশন না করালে দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব হবে না।

এদিকে, আবু হুরায়রার বাবা মাসুদুর রহমান পেশায় একজন দিনমজুর ও ইটভাটা শ্রমিক। অপারেশন করতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন সেই পরিমাণ টাকা সংগ্রহ করা তাদের পক্ষে সম্ভব না। দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে চোখের অপারেশন করতে এক লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছে ভিশন আই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

আবু হুরায়রা ঢাকা পোস্টকে বলেছে, আমার চোখের সমস্যাটা ক্রমান্বয়ে অবনতির দিকে যাচ্ছে। এখন ডান চোখে কিছুই দেখতে পাই না। আর বাম চোখে সব ঝাপসা দেখছি। ডাক্তার বলেছেন আমার চোখের কর্নিয়া দিনে দিনে পাতলা হয়ে যাচ্ছে। দ্রুত চোখের অপারেশন করালে দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবো। অন্যথায়, চিরদিনের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারাতে হবে।

সে বলেছে, আমি ২৯ পারা কোরআন মুখস্থ করেছি। চোখের সমস্যার কারণে বাকি এক পারা মুখস্ত করতে পারছি না। আমার বাবা দিনমজুর ও ইটভাটার শ্রমিক। এতোগুলো টাকা কোনো দিনও একসঙ্গে করতে পারবেন না তিনি। যদি কেউ সহযোগিতা করে তবেই চোখের অপারেশন করাতে পারবো।

আবু হুরায়রার বাবা মাসুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চার বছর আগে একদিন আবু হুরায়রা জানায়, সে চোখে কম দেখছে। ওই সময় তাকে সাতক্ষীরা শহরের সিবি হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো হয়। তবে সেখানে অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো হয়। ডাক্তার একটি চশমা ব্যবহার করার পরামর্শ দেন। তবে চশমাটি ব্যবহার করার পরে অবস্থা বেশি খারাপ হতে থাকে। মাথায় যন্ত্রণাসহ অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এজন্য চশমা ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে কিছুদিন ভালো থাকলেও এখন সমস্যাটা আরও বেড়ে গেছে। ডান চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছে না আর বাম চোখেও ঝাপসা দেখছে। কিছুদিন আগে ঢাকার ভিশন আই হাসপাতালে ডাক্তার দেখালে সেখানকার ডাক্তার জানান দ্রুত চোখের অপারেশন করাতে হবে। তবেই দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া সম্ভব। অপারেশন করাতে এক লাখ ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। আমি একজন ইটভাটা শ্রমিক। যেটা ইনকাম করি সেটা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চালাই। এতোগুলো টাকা কীভাবে জোগাড় করবো। সবাই সহযোগিতা করলে আমার ছেলের চোখের দৃষ্টি ফেরানো অসম্ভব।

প্রতিবেশী আবুল কালাম আজাদ বলেন, হাফেজী পড়ুয়া আবু হুরায়রা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ২৯ পারার হাফেজ হয়েছে সে। চোখে সমস্যা হওয়ার কারণে এখন আর পড়তে পারছে না। তার চোখের চিকিৎসা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। 

এ বিষয়ে ৪নং কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আজিজুর বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে একটি প্রত্যয়নপত্র দিয়েছি। মানবিক মানুষদের সহযোগিতা কামনা করছি।

পাটকেলঘাটা সিদ্দিকা মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ ইমামুল ইসলাম বলেন, আবু হুরায়রা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। সে খুব অল্প সময়ে ২৯ পারা কোরআন মুখস্ত করেছে। তবে দুঃখের বিষয় তার চোখের চল্লিশ শতাংশ ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। আবু হুরায়রার বাবা একজন দিনমজুর এতো টাকা তার পক্ষে সংগ্রহ সম্ভব নয়। মাদরাসার সকল শিক্ষক মিলে তাকে সীমিত সহযোগিতা করতে চেয়েছি। এভাবে যদি সবাই এগিয়ে আসে সেক্ষেত্রে পুনরায় দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাবে আবু হুরায়রা। 

এ বিষয়ে তালা উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার সুমনা শারমিন বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। আবু হুরাইয়ারার পক্ষ থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে আবেদন দিলে আবেদনটি সমাজ কল্যাণ পরিষদে পাঠানো হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমোদন হয়ে এলে সহযোগিতা করা হবে।

সোহাগ হোসেন/এমএএস