নরসিংদীতে পৃথক ঘটনায় দুই নারীসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার (১৮ মার্চ) জেলার শিবপুরে একজন, রায়পুরায় একজন ও পলাশ উপজেলায় দুইজন নিহতের ঘটনা ঘটেছে।

এর মধ্যে শনিবার সকালে জেলার শিবপুর উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের শালুরদিয়া গ্রাম থেকে মনি আক্তার (২৮) নামের এক গৃহবধূর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ বারান্দার গ্রিলে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে নিহতের পরিবার।

এই ঘটনায় স্থানীয়রা নিহতের স্বামী উপজেলার পুটিয়া ইউনিয়নের শালুরদিয়া গ্রামের ইসমাইল হোসেন, ভাশুর শামীম, শ্বশুর রফিজ উদ্দিনকে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে থানায় একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে শালুরদিয়া গ্ৰামের মৃত শরিয়ত উল্লাহ মোক্তারের মেয়ে মনি আক্তার ও একই গ্রামের রফিজ উদ্দিনের ছেলে ইসমাঈলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের পর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসার ভালোই চলছিল। এর মধ্যে তাদের তিন মেয়ের জন্ম হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাবা-ছেলের মধ্যে মামলা চলমান থাকায় সংসারে অশান্তি শুরু হয়। বাবার দেওয়া মামলায় একাধিকবার জেলও খেটেছেন ইসমাইল। পারিবারিক কলহের জের ধরে শুক্রবার দিবাগত রাতের কোনো একসময় তাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর ঘরের বারান্দায় গ্রিলের সঙ্গে ওড়না দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ  নিহতের পরিবারের।

নিহতের মা বিলকিস বেগম বলেন, আমার মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন হত্যা করে ঝুলিয়ে রেখেছে। আমি তাদের ফাঁসি চাই।

বিষয়টি নিশ্চিত করে শিবপুর মডেল থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) আবুল ফায়েজ বলেন, আমরা সংবাদ পেয়ে নিহতের স্বামীর ঘরের বারান্দায় বসা অবস্থায় গ্রিলের সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচানো মরদেহটি উদ্ধার করি। মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করা হয়েছে।

এদিকে জেলার পলাশ উপজেলায় পৃথক ট্রেন দুর্ঘটনায় অজ্ঞাত এক নারী (৩৯) ও এক পুরুষের (৩৫) মৃত্যু হয়েছে। শনিবার উপজেলার ঘোড়াশালে ফ্ল্যাগ রেলস্টেশন ও ঘোড়াশাল রেলস্টেশনের মাঝামাঝি রেললাইনের নিচ থেকে অজ্ঞাত এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ।

রেলওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ঘোড়াশাল রেলস্টেশন থেকে রেললাইনে হেঁটে ঘোড়াশাল ফ্ল্যাগ রেলস্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন এক নারী। এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় রেললাইনের পাশে ছিটকে পড়েন ওই নারী। পরে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে জিনারদীর সাতটেকিয়া এলাকার রেললাইনের পাশ থেকে এক পুরুষের ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করে রেলওয়ে পুলিশ। পুলিশের ধারণা শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার মধ্যে ট্রেনে কাটা পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে।

নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক সাইফুল ইসলাম বলেন, মরদেহ দুটির সুরতাল করা হয়েছে। তবে এখনো মৃতদের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। পিবিআইকে জানানো হয়েছে। তারা মরদেহ দুটির পরিচয় শনাক্তে কাজ করবে।

এছাড়া রায়পুরার বাঁশগাড়িতে মো. শাহাবুদ্দিন মিয়া (৭০) নামে এক বৃদ্ধের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সকালে উপজেলার বাঁশগাড়ি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহতের ছেলে হানিফা জানান, গ্রামের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান রাতুল হাসান জাকির ও সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হকের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় দুপক্ষের লোকজন একাধিকবার ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। এতে মারামারি, ভাঙচুর, লুটপাট, চাঁদাবাজিসহ নানা ঘটনা ঘটে। পরে সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল হককে একাধিক মামলায় পুলিশ গ্রেপ্তার করলে এলাকায় শুরু হয় নীরব চাঁদাবাজি। একাধিকবার চাঁদার টাকা দিলেও আশরাফুল হকের লোকেরা আবার চাঁদা দাবি করে। এ চাঁদার টাকা দিতে না পেরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আজ সকালে গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি।

এ বিষয়ে রায়পুরা থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) গোবিন্দ সরকার জানান, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এমজেইউ