ছেলেদের বাড়িতে জায়গা হয়নি বৃদ্ধ লিয়াকত আলীর (৭৫)। ছেলেরা তাকে গণশৌচাগারে রেখে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী নগরীর তালাইমারী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিকেলে তালাইমারীর গণশৌচাগার থেকে বৃদ্ধ লিয়াকত আলীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

স্থানীয়রা জানান, বৃদ্ধা লিয়াকত আলীর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে মিঠু। মিঠুর মুদিখানার ব্যবসা রয়েছে। মেজো ছেলে সুমন ও ছোট ছেলে লিমন। তারা দুই ভাই ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মিস্ত্রি (মেরামত করে)। বৃদ্ধ লিয়াকতের তিন ছেলেই সচ্ছল। লিয়াকত আলী যে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন সেখান থেকে তার ছেলেদের বাড়ির মালিক নিয়ে যেতে বললে তারা আজ সকালে তাকে নিয়ে তালাইমারীর গণশৌচাগারের রেখে যান। এক সময় বৃদ্ধ লিয়াতক আলীর জমি ও বাড়ি ছিল। তিনি সব কিছু তার ছেলে-মেয়েদের লিখে দিয়েছেন। এখন কিছুই নেই তার। এমন অবস্থায় নিঃস্ব লিয়াকতের ঠাঁই হয় গণশৌচাগারে।

স্থানীয় বাসিন্দা নাহিদ জানান, তার ছেলেরা মোটামুটি সচ্ছল। এক ছেলে মুদি ব্যবসা করেন। অন্য দুই ছেলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মিস্ত্রি। তাদের মধ্যে একজনের নগরীর কাজলা এলাকায় দোতালা বাড়ি রয়েছে।

তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত ছেলেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ভুক্তভোগী লিয়াকত ও তার সন্তানরা রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। 

এ বিষয়ে নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তরিকুল আলম পল্টু বলেন, গণশৌচাগারে লিয়াকত আলীকে ফেলে রাখার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে পরে আমি বিষয়টি শুনেছি। লিয়াকতের তিন ছেলে। মিঠুর মুদিখানার ব্যবসা আছে আর দুই ছেলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মিস্ত্রির কাজ করেন। তাদের মধ্যে এক ছেলের নগরীর বাজলা এলাকায় দোতালা বাড়ি রয়েছে। অন্য ছেলেরা আলাদা থাকেন।

তিনি বলেন, লিয়াকত আলীর স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে তিনি আরেক নারীকে বিয়ে করেন। বৃদ্ধ লিয়াকতের দ্বিতীয় স্ত্রী এলাকায় মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করেন। লিয়াকত ও তার স্ত্রী একই এলাকার কমলা নামে এক নারীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। এ নিয়ে শুক্রবার বাড়ির মালিক লিয়াকতের ছেলেদের জানান, তাদের বাবা অসুস্থ, নিয়ে যেতে হবে। তখন তারা লিয়াকত আলীকে নিয়ে এসে গণশৌচাগারে বসিয়ে রেখে চলে যান। 

বোয়ালিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ছেলেরা বাবাকে গণশৌচাগারের ভেতরে ফেলে রেখে যায়। জায়গাটা দুর্গন্ধ যুক্ত। পরে বৃদ্ধের তিন ছেলেকে ডেকে তাকে বাড়ি পাঠানো হয়। 

ছেলেদের আর্থিক অবস্থার বিষয়ে তিনি বলেন, ছেলেদের আর্থিক অবস্থা মোটামুটি। তারা লিয়াকতকে দেখভাল করতে পারবে। ছেলেদের বলা হয়েছে- নিজেদের মধ্যে কথা বলে ১৫ দিন ১৫ ভাগ করে নিয়ে বাবাকে রাখতে।

শাহিনুল আশিক/আরএআর