সরকারি নানা বিধিনিষেধ থাকলেও দালালমুক্ত হয়নি কুড়িগ্রামের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) অফিস। সরকারি এ অফিস দালালমুক্ত করতে অনলাইনে আবেদন এবং সরকার-নির্ধারিত ফি জমা দেওয়াসহ সব প্রক্রিয়া অনেকটা সহজ করা হয়। কিন্তু দালাল ছাড়া এখানে সেবা মেলে না। ঘুরতে হয় মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। দালালকে টাকা দিলে কোনোরকম হয়রানি ছাড়াই মেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও মোটরযানের রেজিস্ট্রেশন। এমন অভিযোগ সেবা নিতে আসা ভুক্তভোগীদের।

জানা গেছে, মোটরসাইকেলের অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের সরকারি ফি সাড়ে চার হাজার টাকা হলেও গুনতে হয় প্রায় ১০ হাজার টাকা। কোনো কোনো সময় তার চেয়েও বেশি। তবে কর্তৃপক্ষের বলছে অফিসের বাইরে কেউ কাউকে অতিরিক্ত টাকা দিলে সেই দায়ভার বিআরটিএ অফিসের নয়।

অফিসের প্রধান কর্মকর্তা অসুস্থতাজনিত ছুটিতে। সহকারী প্রকৌশলী আর অফিস সহকারী কাগজপত্র নিয়ে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাইরে দালালদের ভিড়। এমনকি বিআরটিএ অফিসে চাকরি করেও অনেক কর্মচারী পরিচয় গোপন রেখে করছেন লাইসেন্স দেওয়ার দরকষাকষি। মোটরসাইকেলের লাইসেন্সের কথা শুনে আগ্রহ বাড়িয়ে বলছেন, টাকা দেন এক মাসে কাজ করে দিচ্ছি। টাকা দেবেন না, কত বছর পর হবে তার কোনো সীমা নেই

কুড়িগ্রাম বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে জেলায় চার হাজার ৭৭২টি গাড়ির রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন দুই হাজার ৫০ জন। পরীক্ষায় এক হাজার ২৪২ জন উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের নামে ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যুর কাজ চলমান রয়েছে। তবে জেলায় কী পরিমাণ যানবাহন রয়েছে তা জানাতে পারেনি বিআরটিএ অফিস।

গতকাল রোববার (২৬ ফেব্রুয়ারি) কুড়িগ্রামের বিআরটিএ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের প্রধান কর্মকর্তা অসুস্থতাজনিত ছুটিতে। সহকারী প্রকৌশলী আর অফিস সহকারী কাগজপত্র নিয়ে খুবই ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাইরে দালালদের ভিড়। এমনকি বিআরটিএ অফিসে চাকরি করেও অনেক কর্মচারী পরিচয় গোপন রেখে করছেন লাইসেন্স দেওয়ার দরকষাকষি। মোটরসাইকেলের লাইসেন্সের কথা শুনে আগ্রহ বাড়িয়ে বলছেন, টাকা দেন এক মাসে কাজ করে দিচ্ছি। টাকা দেবেন না, কত বছর পর হবে তার কোনো সীমা নেই।

ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদক পরিচয় গোপন রেখে লাইসেন্স করার বিষয়ে কথা বলেন কুড়িগ্রাম বিআরটিএ অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সাবলু মিয়া নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘অনলাইন করেন, ব্যাংক ফি দেন আর যত পরীক্ষাই দেন না কেন নয় হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা ছাড়া লাইসেন্সের দেখা মিলবে না। আপনি যদি লাইসেন্স করতে চান তাহলে টাকাপয়সা নিয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কোথায় কীভাবে কাজ করতে হবে সেই দায়িত্ব আমার। আপনাকে যেদিন ডাকব শুধু সেদিন চলে আসবেন।’

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের রতিগ্রাম থেকে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে এসেছেন সাদিকুল ইসলাম ও মিজানুর রহমান। পরিচয় গোপন রেখে কীভাবে লাইসেন্স করতে হয় জানতে চাইলে তারা বলেন, অনলাইনে আবেদন করে অফিসে যোগাযোগ করতে হবে। আমাদের দুজনের জনপ্রতি ১০ হাজার করে টাকা লাগছে। আশা করছি এই সপ্তাহের মধ্যেই লাইসেন্স হাতে পাব। মাধ্যম ছাড়া কোনোভাবেই আপনি লাইসেন্স করতে পারবেন না। অফিসে যোগাযোগ করেন আপনার কাজ হয়ে যাবে।

ভুরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের ধামেরহাট এলাকার রতন মিয়া ঢাকা পোস্টের এই প্রতিবেদককে বলেন, দালালকে না ধরে অফিসের পিয়নকে ধরেন, কম টাকায় কাজ হবে। আজ রানারের জন্য আবেদন করেন। তারপর কিছু টাকা দেবেন, আপনার পরীক্ষার তারিখ তাড়াতাড়ি দিয়ে দেবে। কিন্তু টাকা ছাড়া লাইসেন্স হবে না, এটা মাথায় রাখেন।

‘আমারটা পেশাদার লাইসেন্স। এক দালাল আমার কাছে ১৮ হাজার টাকা চেয়েছিল, আমি দিইনি। নিজে এসে অফিসের পিয়নকে ধরে ১০ হাজার টাকার মধ্যে করিয়েছি। কাউকে মাধ্যম হিসেবে না ধরলে আপনার ফাইলই খুঁজে পাবেন না। কেউ কোনোদিন মাধ্যম ছাড়া লাইসেন্স করতে পারেননি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম বিআরটিএ’র মোটরযান পরিদর্শক মো. সাজ্জাদুর রহমান বলেন, আমরা তো সবসময় মানুষের সেবা দিচ্ছি। যারা যে সেবা নিতে আসছেন তাদের সেই সেবা দিচ্ছি। অফিসের বাইরে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে তো আমরা দায়ী নই। এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স চালু হয়েছে। গ্রাহক চাইলে অনলাইন থেকে নিজেই ড্রাইভিং লাইসেন্স ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

এমজেইউ