কক্সবাজারে গত দুই দিনে এসেছেন অন্তত সাড়ে ৪ লাখ পর্যটক
দেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজারে ২১ ফেব্রুয়ারির ছুটি উপলক্ষে পর্যটকের ঢল নেমেছে। হোটেল-মোটেলে ঠাঁই হচ্ছে না পর্যটকদের। আগে থেকে হোটেল ঠিক না করে বেড়াতে আসায় থাকার জায়গা পাচ্ছেন না পর্যটকেরা। হোটেল-মোটেল আর কটেজে জায়গা না পেয়ে হাজারো পর্যটক সৈকতের বালুচরে পায়চারি করে অথবা বিভিন্ন স্থানে ঘুরছেন।
হোটেল মালিক ও টুরিস্ট পুলিশের ভাষ্য মতে, গত দুই দিনে অন্তত সাড়ে ৪ লাখ পর্যটক সৈকত ভ্রমণে এসেছেন। এ সময় ব্যবসা হয়েছে শত কোটি টাকার।
বিজ্ঞাপন
মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা গেছে, বিপুল সংখ্যক পর্যটক গোসলে ব্যস্ত। অন্যদিকে হোটেল না পেয়ে শহরের কলাতলী সড়কে দাঁড়িয়ে আছেন অসংখ্য পর্যটক। তাদের সঙ্গে শিশুরাও রয়েছে।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ভ্রমণে এসে দুর্ভোগে পড়তে হবে, তা তাদের জানা ছিল না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলা। বুধবার বিকেলে পর্যটন গলফ মাঠে এই মেলা শুরু হয়েছে। এতে শহরে স্থানীয়দের ভিড়ও বেড়েছে।
এদিকে পর্যটক সমাগমের কারণে শহরসহ সৈকতে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে টুরিস্ট পুলিশ ও জেলা পুলিশ।
জানা গেছে, শহরের পাঁচ শতাধিক হোটেলের বেশির ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। সেন্টমার্টিনের কোনো জাহাজেই খালি সিট মিলছে না। সব জাহাজের টিকিট অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে।
হোটেল ব্যবসায়ীরা বলেন, কক্সবাজারের প্রায় ৫০০ হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে প্রায় দেড় লাখ পর্যটকের রাত যাপনের সুবিধা রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারির ছুটিতে কোনো রুম খালি নেই।
চার ছেলে-মেয়ে নিয়ে সকালে কলাতলী হাঙর ভাস্কর্য মোড়ে নামেন রাজশাহী থেকে আসা লন্ডন প্রবাসী জিকু আহমেদ (৫৫)। তিনি জানান, কলাতলীসহ হোটেল মোটেল জোনে রুম খুঁজ করলেও কোনো রুম মেলেনি। এ জন্য আগাম বুকিং না দেওয়াকে দায়ী করছেন তিনি।
কলাতলী মেরিন ড্রাইভ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান জানান, এই মুহূর্তে শতভাগ রুম বুকিং আছে। এটি আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। পর্যটকদের সেবায় আমরা সবসময় প্রস্তুত। তবে আজ থেকে এভাবে পর্যটক বাড়বে সেটি কল্পনা করিনি।
হোটেল সি গাজীপুর রিসোর্টের মালিক জাব্বার বলেন, আমাদের হোটেলের রুম এখন বুকিং আছে। অনেক পর্যটক অনলাইনে ও অফলাইনে রুম খুঁজছেন। কিন্তু আমরা দিতে পারছি না। পর্যটক বাড়ায় আমরাও অনেক খুশি।
সিলেট থেকে আগত পর্যটক সাব্বির বলেন, কক্সবাজারে জীবনের প্রথম আসা। তবে এখানে এসে এত লোকের সমাগম দেখব সেটা ভাবিনি। আল্লাহর সৃষ্টি এত সুন্দর এটা কল্পনার বাইরে। এখানে এসে খুব ভাল সময় যাচ্ছে।
রংপুর থেকে আগত আরেক পর্যটক বলেন, শুক্রবার সকালে কক্সবাজার পৌঁছলাম। এখনো রুম পাইনি। অনেক জায়গায় খুঁজ করলেও ভালো মানের রুম পাইনি। তবে কয়েকটি কটেজে রুম মিললেও অতিরিক্ত দামের কারণে নিইনি। এখানে অটোরিকশা থেকে শুরু করে সব জায়গায় গলাকাটা বাণিজ্য করছে। এটা প্রশাসনের নজরদারি করা জরুরি বলে অভিযোগ করেন এই পর্যটক।
পর্যটকদের নিরাপত্তায় সি লাইফ গার্ডের ইনচার্জ ওসমান গণি বলেন, ২১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পা রাখারও জায়গা নেই। এ সময়টা আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জ। কারণ লাখো পর্যটকের সমাগম হয়েছে। তবে আমাদের লোকবল মাত্র ৩৪ জন। এটা মোকাবিলা করা আমাদের জন্য কঠিন। তবে পর্যটকরা আমাদের দিকনির্দেশনা মেনে চললে কোনো বিপদ ঘটবে না।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা শাহিন বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আমরা প্রস্তুত। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে হেল্প ডেক্স বসানো হয়েছে। পর্যটকরা আমাদের অভিযোগ কেন্দ্রে অভিযোগ করলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।
সাইদুল ফরহাদ/ওএফ