চোখ উৎপাটনের চেষ্টা, ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে রক্ষা পেলেন গৃহবধূ
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে সাদিয়া (২১) নামে এক গৃহবধূর চোখ উৎপাটনের চেষ্টাসহ অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূর মা গত শনিবার (১৩ মার্চ) রাতে থানায় মামলা করেছেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে সোমবার (১৫ মার্চ) দুপুরে ওই গৃহবধূর মামা সবুজ এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিজ্ঞাপন
মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে উপজেলার গোপালপুর এলাকার পশ্চিম বনগ্রাম গ্রামের অসহায় কৃষক বারেক চৌকিদারের মেয়ে সাদিয়া বেগমের সঙ্গে একই উপজেলার বালিগ্রাম এলাকার গুঙ্গিয়াকুল গ্রামের কাসেম মোল্লার ছেলে নাসির মোল্লার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই বিভিন্ন সময় নাসির মোল্লা স্ত্রী সাদিয়া বেগমকে যৌতুকের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। সাদিয়ার পরিবার অতিদরিদ্র হওয়ায় নাসিরের দাবিকৃত ৫ লাখ টাকার মধ্যে ২ লাখ টাকা দেয়। দাবিকৃত টাকা না পেয়ে নাসির মোল্লা ক্ষিপ্ত হয়ে গত শনিবার (১৩ মার্চ) দুপুরে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে মিলে সাদিয়াকে অমানুষিক নির্যাতনসহ দুই চোখ উৎপাটনের চেষ্টা করে। খবর পেয়ে সাদিয়ার পরিবার উপজেলার ডাসার থানা পুলিশের সহযোগিতায় গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় সাদিয়ার মা পারভীন বেগম বাদী হয়ে জামাই নাসির মোল্লাসহ আটজনকে আসামি করে ডাসার থানায় মামলা করেছেন। ঘটনার পর থেকে নাসির মোল্লা ও তার বাড়ির লোকজন পলাতক রয়েছেন।
সাদিয়ার মামা সবুজ বলেন, আমার ভাগনির বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি থেকে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। ভাগনির সুখের জন্য আমরা ২ লাখ টাকা দিয়েছি। বাকি ৩ লাখ টাকা দিতে না পারায় এবং আমার ভাগনি যাতে পড়াশুনা করতে না পারে সেজন্য তার চোখ নষ্ট করার চেষ্টা করেছে জামাই। শারীরিকভাবে নির্যাতনও করেছে। আমার বিষয়টি জানতাম না। গোপনে আমার ভাগনি নিজে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানায়।
মামলার বাদী পরভীন বেগম বলেন, দাবিকৃত যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় জামাই নাসিরের আমার মেয়েকে দিনের পর দিন প্রচণ্ড মারধর করেছে। তার পরিবারের লোকজন নিয়ে আমার মেয়ের দুই চোখ উৎপাটনের চেষ্টা করেছে। তাই আমি তাদের নামে মামলা করেছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত নাসির মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ডাসার থানা পুলিশের উপপরিদর্শক এসআই মো. রিপন মোল্লা বলেন, খবর পেয়ে আমি সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ওই গৃহবধূকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করেছি। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) আব্দুল হান্নান জানান, ভুক্তভোগী গৃহবধূ সাদিয়া ৯৯৯ নম্বরে কল করে অভিযোগ জানালে পুলিশ তাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এ ব্যাপারে তার মা বাদী হয়ে আটজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন।
নাজমুল মোড়ল/আরএআর