একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে অর্ধলাখ মানুষ
‘একটা ব্রিজের জন্য কষ্ট করতাছি। এই নদীর উপর একটা ব্রিজ অইলে আমরার খুব বালা অইতো। আমরা অনেক কষ্ট কইরা নদী পার অই। বর্ষায় যহন পানি বেশি থাহে, তহন অনেক রোগী নদী পার অইবার আগেই মরে যায়। নদীর এপারেই কষ্ট কইরা থাহন নাগে। কত মানুষ আইলো, আমাগো ব্রিজ কইরা দেবে কইলো। কিন্তু ব্রিজ আর অইলো না। আমরার একটাই দাবি এইহানে ব্রিজ চাই।’
ঢাকা পোস্টকে এভাবেই কষ্টের কথা বলছিলেন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার মাইজচর ইউনিয়নের মিনারা খাতুন।
বিজ্ঞাপন
বাজিতপুর উপজেলার মাইজচরে গিয়ে জানা যায়, বাজিতপুর উপজেলা সদর থেকে মাইজচর ইউনিয়নটি একেবারেই বিচ্ছিন্ন। স্বাধীনতার পর থেকেই স্থানীয়রা ঘোড়াউত্রা নদীতে সেতু নির্মাণের দাবি করে এলেও আজও সেতু নির্মাণ হয়নি। এই নদী পার হতে গিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ অনেকেই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। এছাড়াও কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে অনেক সময় নদী পার হওয়ার আগেই কেউ কেউ বিনা চিকিৎসায় মারা যায়। পরিবহন সুবিধার অভাবে উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য পায় না কৃষকরা। আর এভাবেই চরম ভোগান্তি নিয়ে চলছে অর্ধলাখ মানুষ।
শিক্ষার্থী কেয়া মনি বলেন, বছরের অধিকাংশ সময় নদীতে অনেক পানি থাকে। অনেক সময় নৌকা দিয়ে নদী পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এছাড়া শুকনো মৌসুমে নদী পার হতে গিয়ে কাদাপানিতে জামাকাপড় নষ্ট হয়ে যায়।
কৃষক হোসেন আলী বলেন, আমাদের বাপ-দাদার আমল থেকে হাজার হাজার মানুষ কষ্ট করে নদী পার হচ্ছে। বর্ষাকালে নদীতে পানি বেড়ে গেলে হাটবাজারে যাওয়া যায় না। এছাড়া পরিবহন সুবিধা না থাকায় আমাদের উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সঠিক মূল্য পাই না।
বাজিতপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জায়েদ উল্লাহ ফুরকান বলেন, এই নদীতে সেতু না থাকায় সারা বছরই আমাদের খুব কষ্ট করতে হয়। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গেলে আমাদেরকেও এর অংশীদার করতে হবে। তাই সেতু নির্মাণের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
দিলালপুর আ. করিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আ. কাইয়ুম জানান, মাইজচর ইউনিয়ন থেকে নদী পার হয়ে আমাদের স্কুলে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আসে। স্কুলে আসার সময় অনেক শিক্ষার্থীদের বই-খাতা নষ্ট হয়ে যায়। অনেক সময় নৌকা ডুবে যায়। এছাড়া নদী পার হয়ে স্কুলে না আসার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ছে। তাই দ্রুত এখানে ব্রিজ তৈরি করার দাবি জানাচ্ছি।
মাইজচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তাবারক মিয়াজি বলেন, উপজেলা সদর থেকে আমাদের ইউনিয়নটি একেবারেই বিচ্ছিন্ন। সারা বছরই নৌকায় কষ্ট করে পার হতে হয়। দেশ স্বাধীনের পর থেকে ব্রিজের দাবি থাকলেও আজও এই নদীর উপর ব্রিজ হয়নি। বর্ষায় নদীতে পানি বেশি থাকে, মাঝে মাঝে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এছাড়া কেউ অসুস্থ হলে সময়মতো চিকিৎসাও করা সম্ভব হয় না। অনেক সময় নদী পার হওয়ার আগেই বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।
জানা যায়, ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মো. আফজল হোসেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি ডিও লেটার দিয়েছেন। কয়েকদিন আগে মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক সেতু নির্মাণের এলাকা পরিদর্শন করেছেন।
এই বিষয়ে এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের পল্লী সড়ক ও গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণে সমীক্ষা প্রকল্পের পরিচালক নির্বাহী প্রকৌশলী মো. এবাদত আলী বলেন, স্থানীয় প্রকৌশলী এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে সেতু নির্মাণের এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি।
তবে শুধু আশ্বাস নয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘোড়াউত্রা নদীতে মাইজচর ও দিলালপুর সংযোগ সেতু নির্মিাণের দাবি ইউনয়নবাসীর।
এমজেইউ