মেলায় এবারের আকর্ষণ সুরমা নদীর বাঘাইড়
পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে দুইশ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা হবিগঞ্জের পইল গ্রামের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা এ বছর আবারও শুরু হয়েছে। এর আগে কোভিড-১৯ এর কারণে দুই বছর এই মেলা বন্ধ ছিল।
রোববার (১৫ জানুয়ারি) দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন ধরনের মাছ উঠেছে মেলাতে। তবে বাহুবল উপজেলার ইসলাম উদ্দিনের বাঘাইড় মাছটিই মেলার প্রধান আকর্ষণ হয়ে ওঠেছে। ৫০ কেজি ওজনের বৃহৎ এ মাছটি দাম চাওয়া হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। মাছটিকে ঘিরে ক্রেতা ও উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।
বিজ্ঞাপন
বিক্রেতা ইসলাম উদ্দিন জানান, পইল মাছের মেলায় বিক্রির জন্য সুরমা নদী তিনি থেকে তিনি এই বিশাল বাঘাইড় মাছটি সংগ্রহ করেছেন। মাছটি তরতাজা ও খেতে ভালো লাগবে। ৫০ কেজি ওজনের এই মাছের মূল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করেছেন। তবে মাছটি শেষ পর্যন্ত কত দিয়ে বিক্রি হয়, তা ক্রেতার ওপর নির্ভর করছে।
মেলার আরেকটি বিশাল বাঘাইড় মাছ নিয়ে এসেছেন হবিগঞ্জ শহরের উমেদনগর এলাকার ধনু মিয়া। তিনি ২৫ কেজি ওজনের মাছটির মূল্য চেয়েছেন ৪৫ হাজার টাকা। পইল গ্রামের রমজান আলী ২০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছের দাম চাচ্ছেন ৩৫ হাজার টাকা। সদর উপজেলার লামা পইল গ্রামের মহব্বত আলী ২৫ কেজি ওজনের একটি বোয়াল মাছের দাম চেয়েছেন ৫০ হাজার টাকা।
পইল গ্রামের মৎস্য বিক্রেতা মজনু মিয়া বলেন, দুই বছর মাছের মেলা বন্ধ ছিল। এ বছর আশা করছি মাছের ব্যবসা ভালো হবে। বোয়াল, পোয়া মাছ, ব্রিগেড, কাতল, নদীর বিভিন্ন ধরনের মাছ এনেছি। আশা করছি ভালো হবে।
যুক্তরাজ্য থেকে আসা সদর উপজেলার আলাপুর গ্রামের কামাল আহমেদ মাছের মূল্য নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরাতো মাছ কিনতে এসেছি। কিন্তু মূল্য বেশি হাঁকা হচ্ছে। যে কারণে অনেক মাছ অবিক্রিত থেকে যেতে পারে।
সরেজমিনে মেলা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকেই হবিগঞ্জের সদর উপজেলার পইল গ্রামের মাঠে ক্রেতা-বিক্রেতারা ভিড় জমিয়েছেন। প্রায় আড়াইশ’ মৎস্য বিক্রেতার পাশাপাশি হাজার হাজার ক্রেতা ও দর্শনার্থী মেলায় ভিড় জমিয়েছেন। এবারের মেলায় বোয়াল ও আইড় মাছ সবচেয়ে বেশি ওঠেছে। এছাড়াও বাঘাইড়, রুই, কাতল, চিতল, গজার, গ্রাস কার্প, মৃগেল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড, পোয়া, টেংরা, পুটি, শিং, কই, শোল, বাইম, চাপিলা, চান্দা, কাকিয়াসহ বিভিন্ন দেশীয় প্রজাতির মাছ ক্রেতাদের আকৃষ্ট করছে।
মাছের মেলাকে ঘিরে কৃষি, গৃহস্থালি, ভোগ্যপণ্য, আখ ও শিশুদের খেলনা ছিল উল্লেখযোগ্য। তাই মেলায় নারী, পুরুষ ও শিশুদের ব্যাপক সমাগম পরিলক্ষিত হয়েছে। এ মেলাকে নিজেদের ঐতিহ্য হিসেবে ধারণ করেন পইল গ্রামসহ এর আশপাশের লোকজন।
পইল গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি সাবেক ফুটবলার শেখ মহরম আলী বলেন, এই মেলা মানেই মিলনমেলা। এ মেলা ঐতিহাসিক। পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এই মেলায় দেশ-বিদেশ থেকে বড় বড় মাছ আসে। এলাকাবাসী এই মেলায় আনন্দ করেন। এই উপলক্ষে আত্মীয়-স্বজন আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। যে কারণে এই কয়দিন আমরা আনন্দের সঙ্গে কাটাই।
পইল বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোস্তফা মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রায় দুইশত বছর ধরে আমাদের পইল মাছের মেলা আয়োজন করা হয়। কোভিড-১৯ এর কারণে দুই বছর মেলা বন্ধ ছিল। এ বছর আবারও প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে মেলা হচ্ছে।
এমএএস