‘মোকে একটা কম্বল দেয় না কাউও’
‘মোরে (আমার) ব্যবস্থা কাউও (কেউ) করে না। বাড়ির সাথোত (সাথে) ইউনিয়ন পরিষদ। কত সুন্দর সুন্দর কম্বল দিছে সবাক (সবাইকে)। মোকে (আমাকে) একটা কম্বল দেয় নাই মেম্বার-চেয়ারম্যান। গত বছর একটা কম্বল পাইছোং (পাইছি)। আইতোত (রাতে) সেইডা (সেটা) আর একটা খেতা (কাঁথা) গাত (গায়ে) দিয়া থাকোং। ঠান্ডায় যায় না, আইতোত ভালো মতো নিন্দো (ঘুম) হয় না। ফির ঠান্ডাতে নামাজও পড়বার পাংনা (পারি না)। খুব কষ্ট হয় মোরে।’
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের সিতাই ঝাড় এলাকার মৃত মোসলেম উদ্দিনের স্ত্রী রুপভান বেওয়া (৭০)।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, মোরে স্বামী সন্তান কাউও নাই। ভাইয়ের বাড়িত থাকোং (থাকি)। ভিক্ষা করি করি চলোং (চলি)। ঠান্ডার জন্য ঠিক মতো বেরেও পাংনা (বাহির হতে পারি না)। মানষে (মানুষ) একটা জাম্পার দান করছে, তাহে (সেটা) গাত (গায়ে) দিয়া বেড়াং (চলি)।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রুপভান বেওয়ার স্বামী-সন্তান কেউ নেই। থাকেন ওই ইউনিয়নের সিতাই ঝাড় গ্রামের ছোট ভাই দিনমজুর ফুলবর মিয়ার বাড়িতে। এই বয়সে ভিক্ষাবৃত্তি করেই দিন অতিবাহিত করছেন তিনি। এনআইডি কার্ড না থাকার কারণে পাচ্ছেন না কোনো সরকারি সহযোগিতাও।
স্থানীয় বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, রুপভান বেওয়া ভিক্ষা করেন। তার স্বামী সন্তান বলতে কেউ নেই। ভাইয়ের বাড়িতে থাকেন। তার ভাইও দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান। এ সমস্ত মানুষ এখনো শীতবস্ত্র পায়নি, এটা দুঃখজনক।
সদরের পাঁচগাছী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল বাতেন সরকার বলেন, আমার ইউনিয়নে সরকারিভাবে ৫০০ কম্বল পেয়েছি। সেগুলো মেম্বারদের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। ইউএনও অফিস থেকে কম্বল দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে। কম্বল পেলে দুস্থ ও অসহায় মানুষদের দেওয়া হবে।
এদিকে গত ছয় দিন ধরে জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। কনকনে ঠান্ডার কারণে দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষজন পড়েছেন বড় বিপাকে। ঠান্ডার কারণে সময় মতো কাজে যেতে পারছেন না তারা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া ও কৃষি পর্যবেক্ষণাগারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তুহিন মিয়া বলেন, শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা ছয় দিন ধরে কুড়িগ্রাম জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আমাদের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে এই জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়াও বৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
জুয়েল রানা/আরএআর