গাজীপুরের স্বাস্থ্য বিভাগের ছুটি বাতিল
চলছে বিশ্ব ইজতেমার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
টঙ্গীতে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। আর তিন দিন পরেই টঙ্গীতে শুরু হচ্ছে এবারের বিশ্ব ইজতেমা। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত মোতাবেক সোমবার দুপুরে টঙ্গী শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক নোটিশ দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, আগামী ১২ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ওই আদেশ বলবৎ থাকবে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার দুপুরে ওই হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে বিশ্ব ইজতেমা কর্মপরিকল্পনা নিয়ে রিভিউ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কেন্দ্রীয় সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রকের (সিডিসি) পরিচালক অধ্যাপক মো. নাজমুল হোসেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঢাকা ডিভিশনাল ডিরেক্টর মো. ফরিদ হোসেন মিয়া, গাজীপুরের সিভিল সার্জন মো. খায়রুজ্জামান, শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলমসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১২ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি পর্যন্ত গাজীপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের সেবা কার্যক্রম প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। মুসল্লিদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে স্বাস্থ্য বিভাগের ৫টি ক্যাম্প স্থাপনের কাজ চলছে। এখান থেকে ২৪ ঘণ্টা মুসল্লিদের বিনামূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হবে। প্রতিটি ক্যাম্পে পালা করে দুজন চিকিৎসক, দুইজন সহকারী ও দুইজন অফিস সহায়ক কাজ করবে। হোন্ডা কারখানা গেইট, বাটা সু গেইট, মুন্নু নগর, বিদেশি তাঁবু ও টঙ্গী জংশন এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের এসব ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হবে।
শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এসব ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প ছাড়া টঙ্গী হাসপাতালে ডায়রিয়া, অ্যাজমা, ট্রমা, বক্ষব্যাধি, ডায়রিয়া, ডেঙ্গু, নাক-কান-গলা, চক্ষু ও বার্ন ইউনিটের কার্যক্রম চলবে। এজন্য পর্যাপ্ত বেডও থাকবে। ইজতেমা উপলক্ষে টঙ্গীর এ হাসপাতালে ৭ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক থাকবেন।
আগামী ১৩ জানুয়ারি (শুক্রবার) থেকে শুরু হয়ে ১৫ জানুয়ারি (রোববার) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের (জুবায়েরপন্থি) বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে ২০ জানুয়ারি দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের অনুসারী (মাওলানা সা’দপন্থি) মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে অংশ নেবেন। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে এবারের বিশ্ব ইজতেমার সমাপ্তি ঘটবে।
এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে আয়োজক কমিটির প্রকৌশলী মো. মাহফুজ বলেন, ইতোমধ্যে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। এবার বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে পুরো ইজতেমা ময়দানকে ৯১টি ভাগে (খিত্তা) ভাগ করা হয়েছে। এসব খিত্তায় জেলাওয়ারি মুসল্লিরা অবস্থান নেবেন। বুধবার (১১ জানুয়ারি) বাদ আসর দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন মেয়াদী জামাতবদ্ধ মুসল্লিরা মাঠে অবস্থান নেবেন। ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে রয়েছে বিদেশি মুসল্লিদের জন্য আধুনিক সুবিধা সম্বলিত টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি প্যান্ডেল। সেখানে বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও গ্যাস দিয়ে রান্নার সুবিধা থাকবে।
বিশ্ব ইজতেমায় নিরাপত্তার বিষয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা নিরাপত্তা চাদরে মোড়ানো থাকবে। পুলিশ, র্যাবসহ ১০ হাজারের অধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও রুফটপ থেকে পুরো ইজতেমা ময়দানের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এ ছাড়া স্পেশালাইজড টিমসহ প্রতিটি ‘খিত্তা’য় সাদা পোশাকে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন এবং তুরাগ নদীতে থাকবে নৌ টহল। অগ্নিনির্বাপণের জন্য প্রতি খিত্তায় এবার দুটি করে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা হবে। স্পেশাল ফোর্স হিসেবে থাকবে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) ও আকাশে থাকবে হেলিকপ্টার টহল।
শিহাব খান/ওএফ