চুয়াডাঙ্গায় টানা তিন দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। রোববার (৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। একই সঙ্গে আজ সকালে যশোরে ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। 

এর আগে শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং শনিবার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। টানা তিন দিন ধরে সারাদেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রকিবুল হাসান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রোববার সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গা ও যশোরে ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। আজ থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে।

এদিকে তীব্র শীতে জবুথবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুয়াশায় ঢেকে থাকছে রাস্তাঘাট, ফসলি জমিসহ চারপাশ। শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। কুয়াশার চাদরে চারপাশ ঢাকা থাকায় স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটছে। গ্রামগঞ্জে হিমেল বাতাসের সঙ্গে ঠান্ডা বেশি থাকায় কষ্ট বেড়েছে জনজীবনে। রোগবালাই থেকে বাঁচতে গরম পোশাক পরে কাজে নেমে পড়েছেন অনেকেই। প্রচন্ড বাতাসে গ্রামাঞ্চলে ঘরের বাহিরে রান্না করাও মুশকিল হয়ে পড়েছে। 

শীতের প্রকোপ বাড়ায় সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ। ফলে বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। সকালে বাড়ি থেকে বের হয়েও কোনো কাজ পাচ্ছেন না তারা। হেডলাইট জ্বালিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। হিম বাতাসে সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ আর ছিন্নমূল মানুষ। আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের করছেন অনেকে।

অপরদিকে শীতজনিত কারণে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বয়স্ক রোগীর সংখ্যা কমলেও কমেনি শিশু রোগীর সংখ্যা। গত তিন দিনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে শিশুসহ ভর্তি হয়েছে ১০৩ জন রোগী। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে ৬৮ শিশু, এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১৯ শিশু। তবে ডায়রিয়া, শিশু ও মেডিসিন ওয়ার্ডে পূর্বের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কম দেখা গেছে। এছাড়া প্রতিদিন বহির্বিভাগে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত প্রায় চার শতাধিক শিশু, বয়োবৃদ্ধ চিকিৎসা নিচ্ছেন।

তীব্র শীতে স্কুলপড়ুয়া শিশু-কিশোরেরাও বেশ কষ্ট পাচ্ছে। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, তীব্র শীতে বাচ্চারা উঠতে চাইছে না। আমরাও জোর করতে পারছি না। এই জন্যেই মাঝে মধ্যেই স্কুলে যেতে দেরি হচ্ছে বাচ্চাদের।

রোববার ভোরে কাজের সন্ধানে আসা কয়েকজন দিনমজুর জানান, তীব্র শীতে হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ঘর থেকে বাইরেই বের হওয়া যাচ্ছে না। পেটের দায়ে কাজে যেতে হচ্ছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় এই তিন দিন কোনো কাজ পাচ্ছেন না তারা। 

ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক জালাল উদ্দিন বলেন, আমি রাতে রিকশা চালাই। তীব্র শীতে ঠান্ডায় হাত যেন চলে না। আমি গরিব মানুষ, একদিন রিকশা না চালালে চলবে না। বাধ্য হয়েই রিকশা চালাতে হচ্ছে। এই শীতে এখন পর্যন্ত কেউ শীতের পোশাক বা কম্বল দেয়নি। 

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান বলেন, তীব্র শীতে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বেশিরভাগই শিশু রোগী। শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে প্রায় সাত শতাধিক বয়োবৃদ্ধ চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৪শ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

আফজালুল হক/আরএআর