পঞ্চগড়ে কমছে তাপমাত্রা, খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ
উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে দিন দিন কমছে তাপমাত্রা। টানা তিন দিন ধরে বইছে হিমেল হাওয়া, সঙ্গে শীতের প্রকোপ। তীব্র শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ভোর থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকছে পুরো জেলা। দুপুরে সুর্যের দেখা মিললেও রোদের তেজ নেই। বিকেল গড়ালেই শুরু হয় উত্তরের হিমেল হাওয়া। সন্ধ্যার পর থেকেই বাড়তে থাকে শীতের মাত্রা। এ অবস্থায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী ও কর্মজীবীরা।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, হিমালয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দুই পর্বতশৃঙ্গের পাদদেশে অবস্থিত হওয়ায় দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে পঞ্চগড়ে বেশির ভাগ সময় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়ে থাকে। ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে ১০ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ২০ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। গত ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারিতে এ জেলায় ৭০ বছরের ইতিহাসে ২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল।
বিজ্ঞাপন
রোববার (৮ জানুয়ারি) সকালে জেলার ওপর দিয়ে টানা তিন দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার তথ্য ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।
তিনি জানান, আজ সকাল ৯টায় জেলায় ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। গতকাল শনিবার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৯.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগে শুক্রবার রেকর্ড হয়েছিল ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা।
শীতের কারণে বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন শ্রেণির খেটে খাওয়া মানুষ। পাথর শ্রমিক, চা-শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে ছোটখাটো যানবাহনের চালকরা পড়েছেন বিপাকে। সকালে তীব্র শীতের কারণে কাজে যেতে পারছেন না অনেকে। তবুও জীবিকার তাগিদে কাউকে নদীতে পাথর তুলতে, কাউকে চা-বাগানে আবার কাউকে দিনমজুরের কাজ করতে যেতে দেখা গেছে। শীতে দুর্ভোগ বেড়েছে শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে। শীতে অসহায় কষ্ট লাঘবের জন্য সরকার যে ত্রাণ দিয়েছে তা একেবারেই অপ্রতুল।
চা-শ্রমিক নাসির উদ্দিন, আরশেদ ও আরিফ জানান, দুদিন ধরে কুয়াশা না থাকলেও মেঘলা পরিবেশ। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় ঠান্ডা বাতাস। এ বাতাসের কারণে শীতের মাত্রা বেড়ে যায়। রাতে মনে হয় তাপমাত্রা জিরোতে চলে আসে। চা-বাগানে কাজ করতে গেলে হাত-পা যেন অবশ হয়ে আসে। কিন্তু জীবিকার তাগিদে কাজে বের হতে হয়।
পাথর শ্রমিক জুয়েল, ইমরান ও জাকির জানান, ঠান্ডায় নদীর পানি বরফের মত মনে হয়। তারপরেও আমাদের পাথরই জীবিকা। তাই কাজে বেড়িয়েছি। কদিন ধরে নদীর ঠান্ডা পানিতে কাজ করে জ্বর-সর্দিতে ভুগলাম। ক্ষুধার্ত পেটতো ঠান্ডা বুঝে না। কিন্তু পরিবারের কথা চিন্তা করে সকালেই পাথর তোলার সরঞ্জাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছি। একই কথা জানান কয়েকজন দিন মজুর ও নারী পাথর শ্রমিক।
নারী পাথর শ্রমিকরা জানান, তীব্র শীতের কারণে তাদেরও কাজে যেতে কষ্ট হচ্ছে। ঘর-সংসার সামলে তাদেরকে জীবিকার তাগিদে কাজে যেতে হচ্ছে। শীতের কারণে তাদের অনেক সময় কাজে যেতে দেরি হলে মহাজনরা কাজে নিতে চান না।
শীতের কারণে পড়ালেখা স্থবির হয়ে পড়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও। হিমেল, সাজু, উজ্জ্বল ও সাফিনাসহ কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী জানায়, প্রচন্ড শীত। রাতে শীতের তীব্রতা বেশি মনে হয়। ঠান্ডার কারণে পড়ালেখা করতে কষ্ট হয়। সকালে কুয়াশা আর বাতাসের কারণে প্রাইভেটে ও স্কুলে যাওয়াও কষ্ট হচ্ছে।
এদিকে শীতের প্রকোপে বেড়েছে নানা শীতজনিত রোগ। জ্বর, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেগুলোতে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই শিশু।
চিকিৎসকরা বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। এমনিতে শীত মৌসুমে আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় বাতাসে জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। শীতজনিত রোগ হিসেবে সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট বেশি হয়ে থাকে। আর শিশু ও বয়স্করা শীতজনিত রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। গতকালের থেকে তাপমাত্রা আরও কমেছে। রোববার সকাল ৯টায় জেলায় ৯.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। যা গতকাল শনিবার ৯.৫ ও শুক্রবার ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল। উত্তর-পূর্বকোণ থেকে ৩ নটিক্যাল গতিতে বয়ে যাওয়া হিমেল বাতাসের কারণে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। সামনে আরও তাপমাত্রা কমবে বলে জানান তিনি।
এসকে দোয়েল/আরএআর