হাওরের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে একটি মাটির ঘর। উঠানে দড়িতে ঝুলছে কয়েকটি কাঁথা। কাঁথাটির এমনই দুরবস্থা যে ছেঁড়ার আর কোনো জায়গাও যেন অবশিষ্ট নেই তাতে। এই কাঁথা দিয়ে কনকনে শীতের রাতে ৭ সন্তানকে নিয়ে ঘুমান সুনামগঞ্জের সদর উপজেলার গোয়ারচড়া গ্রামের ফাতেমা বেগম। 

ফাতেমা বেগম দিনমজুর আলতাব আলীর স্ত্রী। তাদের ২ ছেলে ও ৫ মেয়ে রয়েছে। হাওরে এই শীতে তার মতোই অমানবিক জীবন পার করছে আরও অনেকে। 

ফাতেমা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন বছর এসেছে অথচ আমাদের মনের মাঝে কোনো ফূর্তি নেই। বাচ্চাদের কী খাওয়াবো, কীভাবে পড়াব এগুলো নিয়া চিন্তায় থাকি। এই যে শীত আসছে ছেঁড়া কাঁথা আর কাপড় পরে কাটাচ্ছি। একটা কোলের শিশু নিয়ে খুব কষ্টে আছি। বন্যা আমাদের কাঁথা-বালিশ, গরু-ছাগল সব নিয়ে গেছে। 

জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার দেখার হাওরের মধ্যে গোয়ারচরা, ইসলামপুর, হালুয়ারগাঁসহ বেশ কয়েকটি দরিদ্র গ্রাম রয়েছে। বিদায়ী বছরের জুন মাসের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয় পুরো জেলা। জেলার ১২টি উপজেলার প্রায় সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছিল বন্যার পানিতে। বন্যা কবলিত হয়ে পানি বন্দি ছিলেন অর্ধলক্ষাধিক পরিবারের অন্তত ২৫ লাখ মানুষ। প্রাণ বাঁচাতে মানুষ আশপাশের উঁচু স্থাপনায় আশ্রয় নেয়। কোনোমতে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও পানিতে তলিয়ে যায় ঘরবাড়ি, ভেসে যায় গৃহস্থালীর জিনিসপত্র। নষ্ট হয়ে যায় ঘরে থাকা লেপ-তোষক, বালিশ ও শীতবস্ত্র।

এদিকে নতুন বছরে সুনামগঞ্জে জেঁকে বসেছে শীত। বন্যায় লেপ-তোষকসহ শীতবস্ত্র হারিয়ে এখন অমানবিক জীবনযাপন করছেন হাওর পাড়ের মানুষেরা। বিশেষ করে নিম্নআয়ের কৃষি ও শ্রমজীবী পরিবারের লোকজন অর্থাভাবে শীতবস্ত্র কিনতে না পেরে ছেড়া কাপড় ও কাঁথা দিয়ে কোনোমতে শীত নিবারণ করছেন। শীতের প্রকোপ কমাতে  শীতবস্ত্র বিতরণের দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে চাহিদার তুলনায় সরকারি শীতবস্ত্র অপ্রতুল বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। 

গোয়ারচড়া গ্রামের বিধবা গুলফর বিবি বলেন, বন্যায় আমার কাপড়-চোপড় নিয়ে গেছে। সঙ্গে আমার ঘরও নিয়ে গেছে। এখন অন্যের দিকে চেয়ে থাকি। তারা খাবার দিলে খাই, কাপড় দিলে পরি। শীতে খুব কষ্ট পাচ্ছি। 

একই গ্রামের ইলিয়াস আহমেদ বলেন, বন্যায় আমার গ্রামের সবার ঘর প্লাবিত হয়েছে। পানিতে সবার আসবাপত্র, কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়েছে। এখন আমাদের গ্রামের মানুষের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শীতের কাপড়। 

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত বছর শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যায় মানুষের যে শীতবস্ত্র ছিল সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে বিতরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে ৪৫ হাজার শীতবস্ত্র পেয়েছি। উপজেলায় সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। এখনো তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আমরা ইতোমধ্যে চিঠি লিখেছি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। বাস্তবতা বিবেচনা করে আরও যেন শীতবস্ত্র পাঠানো হয়। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো বিতরণ করা হবে। এছাড়াও শীতার্ত মানুষের শীত নিবারণে যারা বিত্তবান আছেন তাদের এগিয়ে আসার আহ্বান করছি। 

সোহানুর রহমান সোহান/আরকে