গালি দেওয়ার প্রতিবাদ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও তার স্বজনকে ট্রাফিক বক্সে আটকে মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের এক ট্রাফিক সার্জেন্টের বিরুদ্ধে। আহত ওই ছাত্র বর্তমানে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ।

মারধরের শিকার সাইদুল ইসলাম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে। তিনি গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তার সঙ্গে মারধর করা হয়েছে খালাতো ভাই মারুফ মোল্লাকে।

সাইদুল ইসলাম বলেন, রোববার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে মোটরসাইকেল চালিয়ে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে রূপাতলী গোল চত্বর অতিক্রম করছিলাম। তখন দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্ট শহিদুল ইসলাম আমার মোটরসাইকেলটি থামানোর জন্য বলেন। গাড়ি থামিয়ে তার কাছে গেলে তিনি কাগজপত্র দেখতে চান। আমি কাগজপত্র দেখাই। তবে আমার মাথায় হেলমেট ছিল না। এজন্য তিনি মামলা করেন। মামলা যেন না দেন সেজন্য অনুরোধ করতে করতে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা কনস্টেবল মুনছুর আলী হাওলাদার পুলিশ বক্সের (রূপাতলী) মধ্যে যাই। তাকে নিজের পরিচয় দেই। এতে তিনি ক্ষপ্ত হয়ে ওঠেন এবং গালিগালাজ শুরু করেন।

আমরা চলে আসতে গিয়ে তাকে গালিগালাজ না করার জন্য অনুরোধ করি। এতে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর করেন। বডি ওর্ন ক্যামেরা বন্ধ করে তিনি মারধর করেন। আমার বুকে আঘাত করেন। এতে আমি অজ্ঞান হয়ে পুলিশ বক্সের মধ্যে পড়ে যাই। আমাকে মারধরের চিত্র ভিডিও করতে গেলে আমার আত্মীয় মারুফ মোল্লাকেও মারধর করে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যান।

মারুফ মোল্লা বলেন, মারধর করে আমাদের আটকে রেখে থানা পুলিশকে খবর দেয়। আমাদের স্বজনরা খবর পেয়ে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। আমাদের অন্যায় হলে আইন অনুসারে বিচার করবে। কিন্তু মারধর করার এখতিয়ারতো পুলিশের নেই। সেখানে আমার খালাতো ভাই অজ্ঞান হয়ে পরে থাকলেও তাকে চিকিৎসার জন্য উদ্যোগ না নিয়ে উল্টো থানায় পুলিশে সোপর্দ করতে চায়। 

আহত সাইদুলের ভাই শফিকুল ইসলাম বলেন, অন্যায় হলে আইন অনুসারে বিচার হবে আমার ভাইয়ের। কিন্তু পুলিশ বক্সে আটকে মারধর অবশ্যই অপরাধ। এখন হয়তো পুলিশ বিভিন্ন অজুহাত দেবে। কিন্তু ওই বক্সের মধ্যে সিসি ক্যামেরা ছিল না। সার্জেন্ট শহিদুল মারধরের সময় বডি ওর্ন ক্যামেরা বন্ধ করে নিয়েছিলেন। এমনকি সেখানে পুলিশের টিআই আরিফ মাহমুদও উপস্থিত ছিলেন। তিনিও মারধরের পক্ষে অবস্থান নেন।

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা সার্জেন্ট শহিদুল ইসলাম বলেন, তাকে মারধর করা হয়নি। হেলমেট না থাকায় মামলা দেওয়া হয়। তখন তিনি তার পরিচয় দেন। কিন্তু তারপরও মামলা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে অভিযোগ করছেন। তার গায়ে হাত দেইনি। তিনি যখন উত্তেজিত হয়ে ওঠেন তখন থানা পুলিশে খবর দেই। পুলিশ আসলে হঠাৎ নিচে পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ভান করেন। আসলে ওই শিক্ষার্থীর অনুরোধ উপেক্ষা করে আইন প্রয়োগ করায় আমাকে জব্দ করতেই নাটক সাজিয়েছেন। 

ঘটনার সময় বডি ওর্ন ক্যামেরা চালু ছিল কিনা জানতে চাইলে শহিদুল ইসলাম বলেন, তখন ক্যামেরাটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।  

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) আরিফ মাহমুদ বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়নি। দুজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক হয়েছে সত্য। কিন্তু অনুরোধ না রাখায় ওই শিক্ষার্থী মেঝেতে লুটিয়ে পড়ে অজ্ঞান হওয়ার ভান করে পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছেন।

বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার এসএম তানভীর আরাফাত বলেন, ঘটনাটি আমি জেনেছি। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে তাকে মারধর করা হয়নি। তারপরও ঘটনা তদন্তে আমি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি। প্রতিবেদন এলে আসল ঘটনা জানা যাবে। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে পুলিশ সার্জেন্টের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর