২০ অসহায় তরুণ-তরুণীর বিয়ে দিলেন ব্যবসায়ী, খাওয়ালেন ১০ হাজার মানুষ
নোয়াখালীর সেনবাগে ২০ জন হতদরিদ্র অসহায় তরুণ-তরুণীর যৌতুক বিহীন বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিয়েতে ১০ হাজার মানুষের মেজবানি খাবারের আয়োজন করা হয়।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার অর্জুনতলা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ভূঁঞা বাড়িতে মুসলিম রীতিতে তাদের বিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বরের হাতে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা ও কনের গলায় আট আনা স্বর্ণের চেইন পরিয়ে দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন
পুরো আয়োজনের অর্থায়ন করেন সেনবাগ উপজেলার অর্জুনতলা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা বিজিএমই পরিচালক ও টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিব।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিয়ে উপলক্ষে দৌলতপুর গ্রামে সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। আনন্দ-উৎসবের কোনো কমতি ছিল না আয়োজনে। বিয়ের এক দিন আগে বিতরণ করা হয় বর-কনের সাজের কাপড়সহ ফুল সাজানি। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান খাওয়ানো হয় বর-কনের আত্মীয় স্বজনসহ ১০ হাজার মানুষকে।
স্থানীয় বাসিন্দা মুজিবুর রহমান মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন বিয়ে আগে কখনো দেখিনি। আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেক মানুষ এসেছে। রাকিব সাহেব আগে থেকেই এলাকায় দান-অনুদান দিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এবার ১০ জন তরুণ-তরুণীর বিয়ে দিয়ে নতুন রেকর্ড করলেন।
অর্জুনতলা ইউনিয়নের কাজী বেলাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১০ জন অসহায় বর-কনের গণবিয়ে নোয়াখালীতে এবারই প্রথম। যার ফলে আয়োজক আবদুল্লাহ হিল রাকিব দুনিয়া ও আখিরাতে লাভবান হবেন।
কেশাড়পাড় ইউনিয়নের আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা বর মো. সুমন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী সালমা আক্তার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা। আমাদের সামর্থ্য ছিল না এমনভাবে বিয়ের ব্যবস্থা করার। রাকিব স্যার এমন আয়োজন করেছেন এবং নগদ টাকা ও স্বর্ণ উপহার দিয়েছেন। আমাদের জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
সেনবাগ পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের কনে কহিনূর বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার বিয়ের জন্য এমন আয়োজন হবে তা আমি কখনো ভাবিনি। আপনারা আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমি অনেক খুশি। এমন মুহূর্ত যাদের আসে কেবল তারাই বুঝতে পারে।
বরের বাবা মো. মিজান মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি বাবা হয়েও যে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি, রাকিব সাহেব সে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি এখন আমার ছেলের অভিভাবক। যে মেয়েকে আমরা আজ ঘরে নিচ্ছি সে আমাদের মতোই ঘরে থাকবে। আমরা যা খাব তাই খাওয়াব।
গণবিয়ে আয়োজনের আহ্বায়ক সাংবাদিক এম এ আওয়াল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা খুঁজে খুঁজে হতদরিদ্র ১০ জোড়া ছেলে-মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেছি। এখানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাও রয়েছেন। রাকিব সাহেব যা করেছেন তা সেনবাগের ইতিহাসে কখনো হয়নি। তিনি একসঙ্গে ১০ হাজার মানুষের মেজবানির আয়োজন করে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
সেনবাগ পৌরসভার মেয়র আবু নাসের ভিপি দুলাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে অনেক শিল্পপতি আছেন, কিন্তু তাদের মন নেই। রাকিব সাহেবের সেই মন আছে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। আশা করি আগামী দিনেও এমন মানবিক কাজের ধারা অব্যাহত রাখবেন তিনি।
এ বিষয়ে গণবিয়ের আয়োজক আবদুল্লাহ হিল রাকিব ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামাজিক মূল্যবোধ ও দায়বদ্ধতা থেকেই এই আয়োজন করা হয়েছে। আল্লাহ কাউকে সামর্থ্য দিয়ে পরীক্ষা করেন, কাউকে না দিয়ে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ যাকে সামর্থ্য দিয়েছেন তার দায়িত্ব হলো যাকে আল্লাহ সামর্থ্য দেননি তাকে সাহায্য করা। নিয়ত করেছি আগামীতেও আমাদের সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদেরকে সহায়তা দিয়ে যাব।
এ সময় টিম গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) নূর-ই সাইফুল্লাহসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও আলেম-ওলামারা উপস্থিত ছিলেন।
হাসিব আল আমিন/আরএআর