রঙিন মাছ জীবন রাঙিয়ে দিয়েছে তারেকের
কথায় আছে ‘শখের তোলা আশি টাকা’। আর সেই শখ পূরণ করতে গিয়েই রঙিন মাছ চাষ করে এখন সফল উদ্যোক্তা চাঁদপুর সদর উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের চর বাকিলা গ্রামের তারেক হোসেন (৩০)। চাকরির পাশাপাশি বাহারি রঙের মাছ চাষ করে লাভের মুখ দেখছেন তিনি।
পেশায় তারেক একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। চাকরি করেন ঢাকায় একটি বিদেশি কোম্পানিতে। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি একই এলাকার বিল্লাল হোসেনের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, তারেক নিজ বাড়ির আঙিনায় ও পুকুরের জলাশয়ে শখের বশে মাছ চাষ করতেন। সেখান থেকেই শুরু। বর্তমানে ছোট-বড় ৩০টি চৌবাচ্চা ও তিনটি পুকুর, ১০টি অ্যাকুরিয়াম ও ১০টি হ্যাচারিতে বিভিন্ন জাতের প্রায় ১৫ হাজার মাছ রয়েছে তার। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা। মাছের মধ্যে কমেট, গোল্ডফিশ, রেট কে ফরান্ডা, হোয়াইট মলি অরেঞ্জ মলি, ব্ল্যাক মস্কো, মারবেল মলি, ব্ল্যাক মলি, প্ল্যাটি, সোর্ড টেইল, ঘাপটি, পমেট, কৈ কার্প, এঞ্জেল, টাইগার ফিস, শার্ক অন্যতম।
তারেক হোসেন বলেন, ৪ বছর আগে অফিসের অবসর সময়ে ইউটিউবে কৃষিভিত্তিক অনুষ্ঠান দেখে এই মাছের ধারণা নিই। এক হাজার টাকা দিয়ে ঢাকা থেকে রঙিন মাছ ক্রয় করে একটি চৌবাচ্চায় মাছ চাষ শুরু করি। এখন আমি সফলতা অর্জন করেছি। বর্তমানে ৩০টি চৌবাচ্চা, ৩টি পুকুর, ১০টি অ্যাকুরিয়াম এবং ১০টি ভাসমান হ্যাচারিতে মাছ চাষ করছি। লোকাল দোকানগুলোতে পাইকারি মাছ বিক্রয় করি। অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা ও ঢাকার বাইরেও মাছ বিক্রয় করছি। আমি চাকরি করার সুবাদে মাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে আমার ভাইয়েরা ও বাবা থাকেন। তারা দেখাশোনা করার কারণে খরচ অনেক কম হয়। শুধু মাছের খাবার ও ওষুধের খরচ বহন করতে হয়। যার কারণে লাভের পরিমাণ একটু বেশি। মাছ বিক্রি করে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ হাজার টাকার মতো আয় হয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা মাছ বিক্রয় করে যে পরিমাণ আয় করি সেটার কিছু টাকা দিয়ে প্রকল্পটি বড় করেছি। অল্প জায়গাতে প্রচুর মাছ উৎপাদন হয় এখন। আমার এলাকায় বর্ষায় পানি ওঠার কারণে নানা প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। জায়গার সমস্যার কারণে প্রকল্পটাকে বড় করতে পারছি না। এক্ষেত্রে সরকারি অনুদান পেলে আরও বড় পরিসরে করতে পারব।
তারেকের ছোট ভাই মোহাম্মদ হোসেন বলেন, আমি প্রথম যখন রঙিন মাছেদের খাবার দিতাম, তখন অতিরিক্ত দিয়ে ফেলতাম। বিভিন্ন রোগে মাছ মারা যেত। আমি বুঝতে পারতাম না। ধীরে ধীরে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এখন পরিমাণমতো খাবার দিই।
তিনি আরও বলেন, সরকারি ও বিভিন্ন কোম্পানির সহযোগিতা পেলে বড় আকারে ভবিষ্যতে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মাছ রপ্তানি করতে পারব। তরুণ বেকার, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীরা তাদের কাজের পাশাপাশি বাসার ছাদে, পানির ট্যাংকিতে, চৌবাচ্চায়, প্লাস্টিকের বক্সে, স্টিলের পাত্রে অল্প করে শুরু করতে পারেন। যখন পরিপূর্ণতা লাভ করবেন তখন এটাকে পেশা হিসেবে নিতে পারবেন। আল্লাহর রহমতে আমরা ভালো লাভ করছি। ক্রেতারা আমাদের সার্পোট দিচ্ছেন। আমাদের এখানে ১৫ প্রজাতির মাছ আছে। শীতের মৌসুমে মাছ বেশি ডিম দেয়। কচুরিপানায় কৈ কার্ভ, ব্ল্যাক মোর, গোল্ড ফিস প্রচুর পরিমাণ ডিম দিয়ে থাকে। কচুরিপানা দেওয়ার আগে জীবানুনাশক ওষুধ দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে। আমাদের এখানে এক হাজার পিস মাছ ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি।
তারেকের বাবা মো. বিল্লাল হোসেন জানান, রঙিন মাছ চাষের আয়ের টাকায় তাদের সংসার ও দুই ছেলের পড়ালেখার খরচ চালানো হয়। তারেকের চাকরির টাকা তাদের সংসার খরচের জন্য প্রয়োজন হয় না।
চাঁদপুর সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা তানজীমুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, রঙিন মাছ বাসা-বাড়ি, হোস্টেল, হাসপাতাল, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে সৌখিনভাবে অনেকেই চাষ করে থাকেন। মাছগুলোর দাম সাধারণ মাছের তুলনায় একটু বেশি। বাণিজ্যিকভাবে অনেকেই চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তাদের মধ্যে চাঁদপুর সদর উপজেলা রামপুর ইউনিয়নের তারেক মাছ বিক্রি করে বেশ লাভবান হয়েছেন। তার বাড়িতে কয়েকটি পুকুরে এই মাছ চাষ করছেন। তার আর্থিক দৈন্যতা দূর হয়েছে। তার দেখাদেখি এই পেশায় অনেক তরুণ ঝুঁকছে। তারা আমাদের কাছে পরামর্শের জন্য আসে। আমরা তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে থাকি। এই মাছ চাষের মাধ্যমে দেশে বেকারত্ব দূর হবে। আর্থিক উন্নতি হবে।
আনোয়ারুল হক/আরকে