রংপুর সিটি করপোরেশনে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। নির্বাচনে জয়লাভের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মোস্তফা বলেছেন, এ বিজয় রংপুরবাসীর বিজয়। এ বিজয় জাতীয় পার্টির বিজয়। জাতীয় পার্টির রংপুরের নেতাকর্মী ও রংপুরবাসীকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। 

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। 

তিনি বলেন, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। মহাসচিব মহোদয়কে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সকল কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়াম সদস্যদেরকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। আমি মনে করি আমার এ বিজয়ে জাতীয় পার্টি অনুপ্রারণীত হবে। জাতীয় পার্টির কর্মীদের অনুপ্রেরণা যোগাবে। শক্তি হিসেবে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে এই প্রত্যয় আমি রাখছি। পাশাপাশি আমি মনে করি যে এ বিজয়টা ছিল অনেক কষ্টার্জিত বিজয়। কষ্টার্জিত বিজয় বলব এ কারণে, আমাদের আসলে যে প্রত্যাশা ছিল ভোটের ব্যবধান যতটুকু হবে কিন্তু ভোট কম কাস্টিং হওয়ার কারণে সেটা অনেকটা কমে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ইভিএমে অনেক ক্রুটি ছিল। অনেক ক্রুটিপুর্ণ ইভিএম ভোটকেন্দ্রে নিয়ে গেছিলো আমি দেখেছি। অনেক ইভিএম রিপেয়ার করতে সময় লেগেছিল।
 
মোস্তফা বলেন, বয়োজ্যেষ্ঠরা ইভিএম এ ভোট দিতে না পেরে কেন্দ্র থেকে ফিরে গেছেন। নির্বাচন কমিশন কথা দিয়েছিল তারা ডোর টু ডোর ইভিএম প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছিল কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা কথাই বলতে পারে শুধু, কাজের বেলায় নাই। আমরা প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে ইভিএম সম্পর্কে জানাতে একটা উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু সেটা নাকি আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। রংপুরবাসীর ইভিএম এর সঠিক ধারণা না থাকায় ভোট কাস্টিং ধপাস করে পড়ে গেছে।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমে ভোটগ্রহণ শেষে রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে রাত ১২টায় রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন। 

ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী, লাঙ্গল প্রতীকে মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা পেয়েছেন ১ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল হাতপাখা প্রতীকে পেয়েছেন ৪৯ হাজার ৮৯২ ভোট।

তৃতীয় অবস্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী লতিফুর রহমান মিলন হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৮৮৩ ভোট। ভোট ব্যবধানে চতুর্থ অবস্থানে থাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ২২ হাজার ৩০৬ ভোট।

অর্থাৎ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর নৌকার চেয়ে মোস্তফাজিার রহমান মোস্তফা ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৯ ভোট বেশি পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

এছাড়া বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী আবু রায়হান ডাব প্রতীকে ১০ হাজার ৫৪৯ ভোট, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন গোলাপ ফুল প্রতীকে ৫ হাজার ৮০৯, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান মশাল প্রতীকে পেয়েছেন ৫ হাজার ১৫৬ ভোট। খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকে ২ হাজার ৮৬৪ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি হরিণ প্রতীকে ২ হাজার ৬৭৯ ভোট পেয়েছেন।

নির্বাচনকে ঘিরে ছিল ছয় স্তুরের নিরাপত্তা বেষ্টনি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতি সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জনের এবং ঝুঁকিপূর্ণ ৮৬টি কেন্দ্রে ১৬ জনের ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়। 

এছাড়া নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ করা হয় ৩৩ জন নির্বাহী হাকিম। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়। র‍্যাব-বিজিবির একাধিক টিম মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় নিয়োজিত ছিল। তারা ভোটের আগে ও পরে মোট পাঁচদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবেন।

এই নির্বাচনে ২২৯ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এবং ১ হাজার ৩৪৯ জন সহকারী প্রিজাইডিং কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া পোলিং অফিসার ছিলেন দুই হাজার ৬৯৮ জন। মোট ৪ লাখ ২৬ হাজার ৪৭০ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ২ লাখ ৭৯ হাজার ৯৬৩ জন। সর্বোপরি নির্বাচনে এবার ৬৫.৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা।

শরিফুল ইসলাম/এমএএস