রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৯টায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ত্রুটির কারণে ভোট দিতে পারেননি রসিক নির্বাচনের জাতীয় পার্টির মনোনীত মেয়র প্রার্থী মুস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিনি রংপুর নগরীর আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে এসে ভোট দিতে পারেননি।

মোস্তফা ভোট কক্ষে প্রায় ১৫ মিনিট অবস্থান করে ভোট দিতে না পেরে বাইরে এসে সাংবাদিকদের সামনে ইভিএম নিয়ে হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে সাবেক এই মেয়র বলেন, আমি সকাল ৯টায় কেন্দ্রে এসেছি। ভোটকেন্দ্রে গিয়ে দেখি ইভিএম হ্যাং করেছে। কিন্তু এর আগে আমার হাতের আঙুলে ভোটগ্রহণের কালি দেওয়া হয়। আমি ১৫ মিনিটের মতো অপেক্ষা করেও ভোট দিতে পারিনি।

মোস্তফা আরও বলেন, অবস্থা যদি এই হয়, তাহলে মানুষ ভোট দেবে কীভাবে? আমি ভোট না দেওয়ার বিষয়টি এখানকার প্রিজাইডিং কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানকে অবগত করেছি এবং সেই সঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেনকেও কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষয়টি অবগত করব।

তিনি ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ভোটাররা এসে বিভ্রান্ত হচ্ছে। কে কোন কক্ষে গিয়ে ভোট দেবে সেটা বোঝা মুশকিল। কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের অবহেলার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। আমরা চাই সবাই সুন্দর সুষ্ঠু পরিবেশ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক।

এ সময় ইভিএম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ মোস্তফা বলেন, আমরা আগে থেকেই বলেছি ইভিএমেএ ধরনের ত্রুটি হতে পারে। রিটার্নিং কর্মকর্তা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন সমস্যা হলে তারা ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আমার বেলায় যদি ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়, সাধারণ ভোটারের ক্ষেত্রে কী হবে এটা ভেবে দেখতে হবে। 

এ প্রসঙ্গে আলমনগর কলেজ রোড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, দ্রুতই ইভিএম ঠিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি কক্ষে এই সমস্যা হয়েছে, সবগুলোতে নয়।

তিনি আরও বলেন, সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই কেন্দ্রে ১৮৭৫ জন ভোটার ১১টি গোপন কক্ষে ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন।

এবার রসিকের ৩৩টি ওয়ার্ডের দুই লাখ ১২ হাজার ৩০২ জন পুরুষ এবং দুই লাখ ১৪ হাজার ১৬৭ জন নারী ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন। আর তৃতীয় লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার ১ জন।

এবারের নির্বাচনে মোট প্রার্থী রয়েছেন ২৬০ জন। এরমধ্যে মেয়র পদে নয়জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৮৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের একজন কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।

মেয়র পদে নয় প্রার্থী হলেন- জাতীয় পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ-ইনু) শফিয়ার রহমান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমিরুজ্জামান পিয়াল, খেলাফত মজলিশের তৌহিদুর রহমান মণ্ডল রাজু, জাকের পার্টির খোরশেদ আলম খোকন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আবু রায়হান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মেহেদী হাসান বনি ও লতিফুর রহমান মিলন।

এই নির্বাচনে মেয়র পদে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়ার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং অফিসার আবদুল বাতেন জানিয়েছেন, ভোট ঘিরে কেন্দ্রে কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রতি সাধারণ কেন্দ্রে ১৫ জনের এবং ৮৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জনের ফোর্স মোতায়েন রাখা হয়েছে।

এছাড়া নির্বাচনী আচরণ বিধি প্রতিপালন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নিয়োগ করা হয়েছে ৩৩ জন নির্বাহী হাকিম। তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবেন। একই সঙ্গে বিভিন্ন অপরাধের সংক্ষিপ্ত বিচার কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১৬ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।

এদিকে র‍্যাব-বিজিবির একাধিক টিম মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী এলাকায় নিয়োজিত রয়েছে। তারা ভোটের আগে ও পরে মোট পাঁচদিনের জন্য নিয়োজিত থাকবেন।

রসিক নির্বাচনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এক হাজার ৮০৭ সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে রংপুর এবং ঢাকায় নির্বাচন অফিস থেকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম দেখতে পেলেই গাইবান্ধা-৫ উপ-নির্বাচনের মতো ভোটগ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন এই রিটার্নিং অফিসার।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে