হাওরে পৌষের শুরুতে চৈত্রের দশা, বোরো ধান আবাদ নিয়ে শঙ্কা
বোরো ধান প্রধান এলাকা সুনামগঞ্জের প্রায় সকল হাওর অঞ্চলেই চাষাবাদ শুরু হয়েছে। কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে অসময়ে দেখার হাওরে পানি শূন্য হয়ে পড়ায় সেচ সংকটে পড়েছেন কৃষকেরা। জমিতে পানি দিতে না পারায় জমি শুকিয়ে ফেটে গেছে। পানির অভাবে হাল চাষ করতে পারছে না শত শত কৃষক। এ যেন পৌষের শুরুতেই চৈত্রের দশা! এতে হাওরে অনেক জমি অনাবাদি থাকার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
তবে আশার আলো দেখাচ্ছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। পানির সংকট দূর কররে বিএডিসির মাধ্যমে ৫টি সেচ পাম্প বসাবেন বলে জানিয়েছে তারা। কয়েক দিনের মধ্যেই পাম্পগুলো বসানো হবে। যেখান থেকে দৈনিক প্রতি মিনিটে দশ হাজার লিটার পানি পাবে কৃষক।
বিজ্ঞাপন
সুনামগঞ্জের দেখার হাওরে চলতি বোরো মওসুমের শুরুতেই চরম সেচ সংকটে পড়েছেন সদর, শান্তিগঞ্জ, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলার শতাধিক গ্রামের হাজারো কৃষক। ভুক্তভোগী কৃষকদের দাবি, পানির অভাবে তারা জমিতে ধান রোপন করতে পারছেন না। সময়মত হাওরের বাঁধ না দেওয়া এবং পানি আটকানোর জন্য দেওয়া বাঁধ কেটে মাছ ধরার কারণে হাওরের পানি দ্রুত কমে গেছে। একই সঙ্গে বন্যা পরবর্তীতে বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে দেখার হাওরে সুনামগঞ্জ সদর, শান্তিগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার ১০ হাজার হেক্টর বোরো জমি চাষাবাদ হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষকদের দাবি, সময়মত সেচের পানি পাওয়া না গেলে অন্তত তিন থেকে চার শ হেক্টর বোরো জমি অনাবাদি থাকবে।
দেখার হাওর পাড়ের লালপুরের কৃষক আলী আসকর বলেন, আমার ৪৩ বছর বয়সে এ রকম হাওর শুকাতে দেখিনি। এখন পানিতে ভরপুর থাকার কথা কিন্তু কোথাও পানি নেই। সব কিছু শুকিয়ে গেছে। আমরা সরকারের কাছে পানির আবেদন জানাই।
লোকমান হোসেন বলেন, হাওরে মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়ে গেছে। এটা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি নয়, মানব সৃষ্টি বিপর্যয়। কিছু স্বার্থলোভী মানুষ যারা মাছ বেশি পাওয়ার আশায় অসময়ে বাঁধ কেটে দিয়েছে যার কারণে এই খড়া শুরু হয়েছে।
আরেক কৃষক মোসাইদ আলী বলেন, যে জায়গায় মাঘ মাসেও পানি পেয়েছি সেই জায়গায় অগ্রহায়ণ মাসেই পানি শুকিয়ে গেছে। পানি না থাকায় মাটি শুকিয়ে ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় হাওরের অর্ধেক জমি পতিত থেকে যেতে পারে।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম বললেন, দেখার হাওরের পানির সমস্যা হচ্ছে এবং আবাদের বিঘ্ন ঘটছে এমন খবর জানার পর তাৎক্ষণিক এলাকা পরিদর্শন করেছি। বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী হাওর পরিদর্শন করেছেন। আমাদের এরকম কোনো সুবিধা না থাকায় বিএডিসির মাধ্যমে সেচের সহায়তা দিতে কয়েক দিনের মধ্যেই হাওরে ডিজেল চালিত ৫টি পাম্প বসানোর ব্যবস্থা করেছি। কয়েক দিনের মধ্যেই পাম্পগুলো সেখানে চলে যাবে। কৃষকের আর পানির সমস্যা থাকবে না।
সোহানুর রহমান সোহান/আরকে