মাদারীপুরে ময়লার স্তূপ থেকে উদ্ধার নবজাতক কন্যাকে আদালতের মাধ্যমে লালন পালনের দায়িত্ব নিয়েছেন রাজবাড়ীর এক সরকারি চাকরিজীবী দম্পতি।বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেল ৪টার দিকে মাদারীপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালতে এ রায় দেন।

গত রোববার (১৮ ডিসেম্বর) সকালে পথচারী ও স্থানীয়রা মিলে পৌরসভা এলাকার চায়ের দোকানের পাশে একটি ময়লার স্তূপ থেকে নবজাতককে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এছাড়াও নবজাতক শিশুটি নিয়ে লালন পালন করার জন্য হাসপাতালে একাধিক লোক ভিড় করেছেন।

আদালত সূত্র জানায়, ময়লার স্তূপ থেকে উদ্ধার নবজাতকটি লালন পালন করতে গত তিন দিন ধরে আগ্রহী দম্পতিরা ভিড় করতে থাকেন। সবশেষ বৃহস্পতিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত আদালতে ১৯ জন দম্পতির আবেদন জমা পড়ে। তিন ঘণ্টা ধরে চলে শুনানি।

এদিন জেলার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মামুনুর রশিদ এজলাসে শুনানি নেন আবেদনকারীদের। প্রথম পর্যায়ে ১৫ জন বাদ পড়লে বাকি ৪ জনের যোগ্যতা অনুসারে আবারও চলে শুনানি।

পরে ৭ লাখ টাকা ফেরতযোগ্য জামানতের মাধ্যমে মরিয়ম আক্তার ও আজিবর হাওলাদার নিঃসন্তান দম্পতিকে নবজাতকটিকে লালন পালনের দায়িত্ব দেন আদালত। 

চিফ জুডিসিয়াল আদালতের নাজির মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, নবজাতক কন্যাকে পাওয়ার জন্য আদালতে ১৯ দম্পতি আবেদন করেছিল। আদালত সব আবেদনকারীর সম্পত্তি, সামাজিক অবস্থান, শিক্ষাসহ বিভিন্ন তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত করেন। 

দত্তক পাওয়া দম্পতির আইনজীবী রুবিনা আক্তার বলেন, আজিবর ও মরিয়ম দুজনই সরকারি চাকরিজীবী ও উচ্চশিক্ষিত। এ দম্পতি রাজবাড়ীর চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে কর্মরত। অন্য আরও যারা যারা আবেদন করেছেন তারাও যোগ্য ছিলেন। কিন্তু জামানত দিয়ে বাচ্চা নিতে নারাজ প্রকাশ করেছে তারা। 

তিনি আরও বলেন, পরিচয়হীন শিশুটি নতুন ঠিকানা পাওয়ায় আমরা সবাই খুশি। সাতদিনের মাথায় নবজাতকের নাম রাখা হবে। আর এখন থেকে পুরো দায়িত্ব পালন করবেন মরিয়ম-আজিবর দম্পতি।

মরিয়ম বলেন, আমাদের কোনো ছেলে মেয়ে নেই। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা এই মেয়েটিকে ইসলামের আলোকে মানুষ করে তুলবো ইনশাআল্লাহ। আমাদের দুজনের সম্পত্তি যা আছে সব মেয়ের নামে লিখে দেবো।

নবজাতককে উদ্ধার করা সাথী আক্তার বলেন, আমি আমার বাসা থেকে পৌরসভা এলাকায় বাচ্চাকে নিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলাম। পথে পৌর এলাকার একটি চায়ের দোকানের পাশে ডাস্টবিনে ময়লা কাপড় দিয়ে মোড়ানো অবস্থায় শিশুটিকে দেখতে পাই। তখন আমিসহ কয়েকজন মিলে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালের নবজাতক ওয়ার্ডে পাঠায়। শিশুটিকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পরিবারকে হস্তান্তর করায় আমি অনেক খুশি হয়েছি।

মাদারীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক নুরুল ইসলাম বলেন, শিশুটি বর্তমানে সুস্থ। আদালতের রায় পেয়েছি। এখন ওই শিশুকে দত্তক নেওয়ার পরিবারের কাছে তুলে দেয়া হবে।

রাকিব হাসান/এমএএস